বিশ্বকাপ কে জিতবে—এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আরও প্রায় দুই মাসের অপেক্ষা। তবে একটা ক্ষেত্রে বিশ্বকাপের আগেই বাকি ৯ দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ বিপুল ব্যবধানে জয়ী। সবার শেষে দল ঘোষণা করাই বাংলাদেশকে আলাদা করে দিতে যথেষ্ট ছিল। সেই দল ঘোষণার আগে যে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা, সেটির কোনো তুলনা নেই। পরশু রাত থেকে নাটকীয় যে ঘটনাপ্রবাহ, আর কোনো বিশ্বকাপে আর কোনো দলই কি দেখেছে এমন কিছু? মনে হয় না।
এই কিছুদিন আগেও বিশ্বকাপে যাঁর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না, সেই অধিনায়ক কিনা শেষ পর্যন্ত দলেই নেই! দৃশ্যমান কারণ চোট। এর আগেও যে আততায়ীর শিকার হয়ে অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড় ছিটকে পড়েছেন বিশ্বকাপ থেকে। কিন্তু তামিম ইকবালের ঘটনা তো এত সরল নয়। হুট করে অবসর, পরদিনই আবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফিরে আসা…সেই ফিরে আসার পর কে কল্পনা করেছিল, বিশ্বকাপে তিনি দর্শক হয়ে থাকবেন! সেটিও থাকবেন কি থাকবেন না—এ নিয়ে পুরো দেশ তোলপাড় হয়ে যাওয়ার পর। সবকিছু মিলিয়ে যেন সিনেমার এক চিত্রনাট্য।ফিটনেস নিয়ে সংশয় থাকলে সেই খেলোয়াড়কে দলে না নেওয়াটাই স্বাভাবিক। এখানে তা স্বাভাবিক থাকছে না তিনি তামিম ইকবাল বলে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার হিসেবে তর্কাতীত তাঁর অবস্থান। সব ম্যাচ খেলা নিয়ে সংশয় থাকলেও বাংলাদেশ তামিমকে বিসর্জন দেওয়ার বিলাসিতা দেখাতে পারে কি না, এই প্রশ্ন তাই উঠবেই।
আরও বেশি উঠছে যাঁর হাতে আবার অধিনায়কত্বের ব্যাটন তুলে দিয়েছেন, সেই সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কারণে। এক সময়ের হরিহর আত্মা দুই বন্ধু অনেক দিনই মাঠের বাইরে একে অন্যের ছায়াও মাড়ান না। ‘আনফিট’ তামিমের ব্যাপারে সাকিবের আপত্তির কথা জানার পর থেকেই তাই একটা প্রশ্ন মনে জাগছে। তামিমের সঙ্গে সম্পর্কটা আগের মতো থাকলে সাকিব কি বলতেন, পাঁচ-ছয় ম্যাচের জন্য হলেও বিশ্বকাপে আমার তামিমকে লাগবেই লাগবে!
এই প্রশ্নের উত্তর আমরা শুধু অনুমানই করতে পারি। তামিমকে নিয়ে এই নাটক বলুন বা বিতর্ক, পরশু রাত থেকে তা অনুসরণ করতে করতে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের জন্য এ আর নতুন কী! বিতর্ক ছাড়া কখনো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল হয়েছে নাকি! বলতে গেলে প্রতিটি বিশ্বকাপের আগেই তো বড় হয়ে উঠেছে মাঠের বাইরের ঘটনা। কখনো দল নির্বাচন, কখনোবা অন্য কোনো কারণে। শুরুটা ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ থেকেই। যেটির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বর্তমান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। দল ঘোষণার আগে অলিখিত ট্রায়াল ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পরও মিনহাজুলকে বাদ দিয়েছিল এনায়েত হোসেন সিরাজের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। অবশ্যই অক্রিকেটীয় কারণে।