২০ বছর আগে বাবা হারানো রুবেল পারভেজ টিউশনি করিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছেন। মায়ের ওপর চাপ কমাতে খরচ জুগিয়েছেন ভাইবোনদেরও। এভাবেই স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষে সরকারি চাকরিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় সুখের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল পরিবারটি। কিন্তু রুবেল পারভেজের সংগ্রামের জীবন বাসচাপায় থেমে গেছে সড়কে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের বন্দে কাওয়ালজানী গ্রামে বাড়ি রুবেল পারভেজের (৩০)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে সেলফি পরিবহন নামের বাসের চাপায় প্রাণ হারান তিনি। একই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরও একজনের।
রুবেল পারভেজ ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। প্রশাসন ক্যাডার প্রাপ্তির আশায় ৪২তম বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মানিকগঞ্জের ঝিটকা শাখায় চাকরি করতেন। ধামরাই পৌর এলাকার বাগনগর এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে কর্মস্থলে যেতে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় ঘটে এই দুর্ঘটনা।
গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে রুবেল পারভেজের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাঁর বৃদ্ধ মা কুলসুম বেগম বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘স্বামী হারাইছি। কত কষ্ট করছি। সন্তানগো বুঝবার দেই নাই। আমি অহন কি করুম?’ রুবেলের স্ত্রী ফারজানা আফরিন বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। এক বছরের মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবেন, তা বলে বিলাপ করতে থাকেন।
বিকেলে আসরের নামাজের পর মির্জাপুরের বন্দে কাওয়ালজানী খাদেম আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে রুবেলের মরদেহ দাফন করা হয়। বন্দে কাওয়ালজানী খাদেম আলী উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল বাছেদ মিয়া জানান, অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র রুবেল বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মসজিদে উপস্থিত মুসুল্লিদের কাছে দোয়া চান। তাঁর মৃত্যুতে সবাই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
previous post
next post
সম্পর্কিত খবর
- মন্তব্য
- ফেসবুক কমেন্টস