অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
বাংলাদেশ রাজনীতি সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফরে অগ্রাধিকার পাবে ৩টি বিষয়

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন সফরের পর ব্রাসেলসে এই সফর রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ব্রাসেলস সফরে তিনটি বিষয় অগ্রাধিকার পাবে। এগুলো হলো ঋণ ও মঞ্জুরি হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩৯ কোটি ইউরো পাওয়ার চুক্তির মাধ্যমে গ্লোবাল গেটওয়ে তহবিলে যুক্ততা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে আলোচনা এবং ইইউভুক্ত কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা।

ঢাকা ও ব্রাসেলসের কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে এসব কথা জানিয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন সফরের পর ব্রাসেলসে এ সফর রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এক বছরের বেশি সময়জুড়ে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অব্যাহতভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ওই প্রস্তাবেও ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাসেলসে ২৫ ও ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রথম বৈঠকে অংশ নিতে আগামী মঙ্গলবার বেলজিয়াম যাচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ইইউর ওয়েবসাইটে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রথম বৈঠকের প্রতিপাদ্য উল্লেখ করা হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে একসঙ্গে শক্তিশালী হওয়া’। বৈঠকে ইইউ এবং জোটের অংশীদার আমন্ত্রিত কয়েকটি দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি, ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), সংস্কার এবং উন্নয়নবিষয়ক ইউরোপীয় ব্যাংক (ইবিআরডি), বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। আমন্ত্রিত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ, সেনেগাল, নামিবিয়া, মলদোভাসহ ২০টি দেশের সরকারপ্রধানেরা বৈঠকে অংশ নেবেন।

ইউরোপীয় কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্লোবাল গেটওয়ে কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের জন্য ৩০ হাজার কোটি ইউরোর তহবিল বিনিয়োগের জন্য সাড়ে ১৩ হাজার কোটি ইউরো চূড়ান্ত করা হয়েছে। গ্লোবাল গেটওয়ে কৌশলের মাধ্যমে ইউরোপের দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা এবং নিরাপত্তা জোরদারের মতো বিষয়গুলোয় জোর দেওয়া হয়েছে।

গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রথম দিন অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী অধিবেশনের আলোচনায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে উত্তরণ, শিক্ষা ও গবেষণা, গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল, যোগাযোগের করিডরের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। ২৬ অক্টোবর শেষ দিনের আলোচনায় স্বাস্থ্য পণ্য উৎপাদন এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হবে। ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেল সমাপনী উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশন বক্তৃতা করতে পারেন। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দিনের এ আলোচনায় গ্লোবাল গেটওয়ের আওতায় ৮৯ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনে সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে ইইউ। এরই অংশ হিসেবে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুবিদ্যুতে বাংলাদেশকে ৩৫ কোটি ইউরো ঋণ এবং সাড়ে ৪ কোটি ইউরো মঞ্জুরি হিসেবে দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে এ বিষয়ে চুক্তি সই হবে।

টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটিই হতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় কমিশনের কোনো অনুষ্ঠানে প্রথম অংশগ্রহণ। তিনি ২০১০ ও ২০১৮ সালে অন্য ফোরামের বৈঠকে যোগ দিতে ব্রাসেলস সফর করেছিলেন।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ব্রাসেলসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উরসুলা ফন ডার লেইয়েন বৈঠকে ইইউ–ঢাকা সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তির পর এখন দুই পক্ষের সম্পর্কের উত্তরণ কোন পথে হতে পারে, সেটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। সম্পর্কের পরের ধাপে পারস্পরিক অংশীদারত্বকে উন্নয়ন সহযোগিতা থেকে কৌশলগত সহযোগিতায় উত্তরণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতা বা অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ইইউ সব সময় মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষায় ধারাবাহিক উন্নতির বিষয়টিতে জোর দেয়। ফলে সম্পর্কের পরের ধাপের ক্ষেত্রেও মানবাধিকার একটি অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে থাকবে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকেদের মতে, গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের ফাঁকে বাংলাদেশের নির্বাচনসহ সুশাসন ও মানবাধিকারের বিষয়ে সরকারের অবস্থান ইউরোপীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফর তাৎপর্যপূর্ণ। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকার বাজারসুবিধা (জিএসপি) ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাবে বাংলাদেশের পণ্য। এরপরও জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হলে বাংলাদেশকে অনেকগুলো শর্ত মেনে চলতে হবে। এসব শর্তের অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র, সুশাসন তথা সুষ্ঠু নির্বাচন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশগ্রহণকে কাজে লাগিয়ে ইইউভুক্ত দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান তাঁদের কাছে সরাসরি তুলে ধরতে চেষ্টা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্পর্কিত খবর

হিজরি সন থেকে সরে এলো সৌদি আরব

Hamid Ramim

মেধাসম্পদের উন্নয়ন এসডিজি বাস্তবায়নে অবদান রাখবে: শিল্পমন্ত্রী

gmtnews

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন প্রধানমন্ত্রীর 

gmtnews

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত