ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার গাজা সিটিকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা গতকাল শুক্রবার দাবি করেছে, গাজা সিটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গতকাল তিনি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন।
আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় সশস্ত্র ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোর যোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। উভয় পক্ষের তুমুল লড়াই থেকে বাঁচতে গাজা সিটি ছাড়তে চেয়েও পারছেন না বেসামরিক নাগরিকেরা। এতে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে গত ২৮ দিনে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৯ হাজার ২ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মূল সংযোগ সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সালাহউদ্দিন সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন কিংবা লোকজন চলাচল করতে পারছেন না। উপকূলীয় আল-রাশিদ সড়ক ট্যাংক দিয়ে বন্ধ করা না হলেও নৌ ও বিমানবাহিনী অনবরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়তে থাকায় আগের দিনের মতো গতকালও গাড়িতে করে গাজা সিটি ছাড়ার চেষ্টা করেন বেসামরিক লোকজন। তবে সড়কে এসব গাড়ি হামলার শিকার হয়। কয়েকটি বেসামরিক গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের পতাকাবাহী গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
গাজা সিটিতে এখনো অনেক বেসামরিক লোকজন অবস্থান করছেন। তাঁদের শহর ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও বের হয়ে যেতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে না। লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার কাজটি সমন্বয়ের চেষ্টা করছে রেডক্রস। তবে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার হামাস সরকারের দপ্তরগুলো গাজা সিটিতে অবস্থিত। জিম্মি মুক্ত করার পাশাপাশি স্থল অভিযানের মাধ্যমে হামাসের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে দেওয়া এবং সাংগঠনিক সক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।
এদিক গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ‘কালো ব্যাগে’ করে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছে হামাস। হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, গাজায় সেনা নিহতের যে সংখ্যা ইসরায়েলের সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।
ইসরায়েল বলেছে, গাজায় স্থল অভিযানের পরিসর বাড়ানোর পর থেকে দেশটি ২৪ জন সেনা হারিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর এ নিয়ে ৩৩৮ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামাসের হাতে ২৪১ জন জিম্মি রয়েছে বলে হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে ইসরায়েল।
গাজা ও পশ্চিম তীরের ২৭ লাখ মানুষের সাহায্যের জন্য দ্রুত ১২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ বলেছে, গাজা ও পশ্চিম তীরের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে জরুরি ১২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা প্রয়োজন।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর গাজায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ হাজার ৮২৬ শিশু আর ২ হাজার ৪০৫ জন নারী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা বলেন, গাজায় এখনো ২ হাজার ১০০ জনের মতো নিখোঁজ। তাঁরা বিধ্বস্ত বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
অবরুদ্ধ গাজায় জ্বালানি ঢুকতে না দেওয়ায় একের পর এক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেখানকার একমাত্র ক্যানসার হাসপাতালটিও বন্ধ হয়ে গেছে। আশরাফ আল-কুদরা বলেন, জ্বালানির অভাবে টার্কিশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ হাসপাতালের ১২ ক্যানসার রোগী মারা গেছেন।