বিরোধী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে কুয়েতের সরকার পদত্যাগ করেছে। সোমবার দেশটির আমিরের কাছে সরকার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় দৈনিক আল কাবাস ও আল রাই।
দেশটির নির্বাচিত সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে বিরোধী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা চলছে। সেই অচলাবস্থার অবসানে সহায়তার অংশ হিসেবে কুয়েত সরকার দেশটির আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে।
সংসদে বিরোধীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে চলতি বছরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বিতীয়বারের মতো পদত্যাগ করল। এই পদত্যাগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে দেশটির আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর। তিনি মন্ত্রিসভার এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
গত জানুয়ারিতে কুয়েতের তৎকালীন সরকারের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ নেতৃত্বাধীন এই সরকার মার্চে গঠন করা হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, দেশটির বেশ কয়েকজন বিরোধী সংসদ সদস্য কোভিড-১৯ মহামারি, দুর্নীতি মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের ওপর জোর দিয়েছেন।
সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের এই বিরোধে সংসদে আইন প্রণয়নের কাজ থমকে যায়। এছাড়া গত বছর করোনাভাইরাস মহামারি এবং তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় দেশটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অর্থনীতির চাকা সচল করার লক্ষ্যে সংসদে বাজেট পাসেও বাধার সম্মুখীন হয় সরকার।
কুয়েতে মন্ত্রিসভার সঙ্গে সংসদের অচলাবস্থা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। যা বিভিন্ন সময়ে দেশটির সরকারের রদবদল এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে সমাধান করা হয়েছে। তবে এতে বিনিয়োগ ও সংস্কার কাজ ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হয়।
দেশটির সংসদের বিরোধী আইনপ্রণেতারা ২০১৯ সালের শেষের দিকে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহকে দুর্নীতি, করোনা মহামারি, অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। একই সঙ্গে গত মার্চে সংসদে পাসকৃত একটি প্রস্তাবের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
ওই প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীকে যে কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ আগামী বছরের শেষের দিক পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়। শেখ সাবাহকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের সাধারণ ক্ষমার দাবি জানানো বিরোধীদের সঙ্গে সংসদের এই অচলাবস্থা কাটাতে সম্প্রতি দেশটির সরকার আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে।
রোববার কুয়েতের মন্ত্রিসভায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের পরিকল্পিত সাধারণ ক্ষমার খসড়া ডিক্রি অনুমোদন দেওয়া হয়। কুয়েতের সরকার বলছে, বিরোধী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার কারণে গত কয়েক মাস ধরে আইন প্রণয়নের কাজ আটকে রয়েছে। এই সংকট নিরসনে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের সাধারণ ক্ষমার খসড়া ডিক্রি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
কুয়েতে রাজনৈতিক দলের অনুমতি না থাকলেও দেশটির সংসদের ক্ষমতা অন্যান্য উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি। দেশটির সংসদের আইন পাস ও আটকে দেওয়ার ক্ষমতা, মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ডাক দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
একটি মন্তব্য করা হয়েছে
[…] ৮ নভেম্বর কুয়েত সরকার আমিরের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেয়। ১৪ নভেম্বর আমির এ পদত্যাগ […]