অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
খেলা ফুটবল সর্বশেষ

এ বছরের প্রিমিয়ার লিগ কেন রোমাঞ্চকর

৩৮ ম্যাচের ১৩, অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে শেষ। এবারের প্রিমিয়ার লিগে সব দলের এক-তৃতীয়াংশ ম্যাচ শেষে যে পয়েন্ট তালিকা দাঁড়িয়েছে, তাতে শীর্ষ তিনটি স্থানে আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুলের নাম। অবস্থানের মতো দলগুলোর পয়েন্টের ব্যবধানও এক করে। (গত রাতের আর্সেনাল–উল্ভস ম্যাচের আগপর্যন্ত) ১৩ ম্যাচ শেষে আর্সেনালের পয়েন্ট ৩০, সিটির ২৯ আর লিভারপুলের ২৮। অর্থাৎ এক থেকে তিনের মধ্যে থাকা দলগুলোর পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র দুই। প্রিমিয়ার লিগে এমনটা সর্বশেষ দেখা গেছে ২০১৫-১৬ মৌসুমে।

শুধু এই একটা কারণেই নয়, আরও বেশ কিছু কারণে প্রিমিয়ার লিগের ২০২৩-২৪ পরিণত হতে যাচ্ছে রোমাঞ্চকর এক মৌসুমে। গেল সাত মৌসুমের ছয়টিতেই ট্রফি জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি, একটিতে লিভারপুল। এ ছাড়া গত মৌসুমে আড়াই শ দিনের বেশি পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ছিল আর্সেনাল। কিন্তু এর সবই ছিল একমুখী বা দ্বিমুখী লড়াই। ত্রিমুখী লড়াই দেখা যায়নি অনেক দিন। এবার সেটিরই আভাস মিলছে প্রতি সপ্তাহে।

পয়েন্ট তালিকার দিকেই আরেকবার চোখ বোলানো যাক। ১৩ রাউন্ড শেষে শীর্ষ তিন দলের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। চারে ছিল অ্যাস্টন ভিলা, যাদের পয়েন্ট লিভারপুলের মতোই ২৮। অর্থাৎ এক নম্বরে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে চার নম্বর দলের ব্যবধান মাত্র ২ পয়েন্টের। মোট ২৬ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে টটেনহাম, ২৪ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

লিগের এ পর্যায়ে এসে প্রথম তিন দলের পয়েন্ট ব্যবধান যে মাত্র এক করে, এমনটা প্রিমিয়ার লিগ যুগে মাত্র ৯ বার ঘটেছে। এর মধ্যে পাঁচবার প্রথম ও তৃতীয় দলের ব্যবধান ছিল ২ পয়েন্ট। আর প্রথম ও চতুর্থ দলের মধ্যে মাত্র দুই পয়েন্টের ব্যবধান এর আগে মাত্র একবারই দেখা গেছে। সেই মৌসুমটি হচ্ছে ২০১৫-১৬, যখন সব ভবিষ্যদ্বাণী উল্টে দিয়ে লিগ শিরোপা জিতেছিল লেস্টার সিটি।

এবারের লিগে সামনের দিনগুলোতে যত ওলট-পালটই হোক না কেন, লেস্টারের মতো কোনো দলের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অপটার সুপারকম্পিউটার লিগের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বলছে ম্যানচেস্টার সিটিকে, শেষ সাত মৌসুমের ছয়টিতেই যারা ট্রফি জিতেছে। সিটির লিগ জেতার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে ৭৭.৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০.২ শতাংশ সম্ভাবনা লিভারপুলের। আর আর্সেনাল তৃতীয় স্থানে আছে ৯.৩ শতাংশ নিয়ে। তবে চ্যাম্পিয়ন শেষ পর্যন্ত যে দলই হোক, এবারের লিগে গোল উৎসবের সম্ভাবনা কম। দলগুলোর রক্ষণশক্তিই হয়ে উঠতে পারে শিরোপার নির্ধারক।

প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশক্তির যে ভূমিকা, সেটির একটি চক্র আছে। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে সেরা রক্ষণের দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডই শিরোপা জিতেছিল। কিন্তু পরের সাত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নদের কেউই সবচেয়ে কম গোল হজম করা দল ছিল না। আবার ২০০০-০১ থেকে ২০০৮-০৯—এই ৯ মৌসুমের ৭টিতে জিতেছিল রক্ষণের সেরা দল। কিন্তু ২০০৯-১০ থেকে ২০১৬-১৭ সময়ের আট চ্যাম্পিয়নের মধ্যে রক্ষণের সেরা ছিল মাত্র দুটি।

এরপর আবার ধারা পাল্টেছে। সিটির দাপটের যুগে ছয় চ্যাম্পিয়নের পাঁচটি দলই ছিল মৌসুমের রক্ষণসেরা। শেষ যেবার সেরা রক্ষণের দল জেতেনি, সেটা ছিল ২০১৮-১৯ মৌসুমে। সেবার লিগ জেতার পথে ২৩ গোল হজম করে সিটি, কিন্তু লিভারপুল হজম করে ২২ গোল। সম্ভবত রক্ষণের এদিকটি মাথায় রেখেই এবার আর্সেনালের রক্ষণে মনোযোগ দিয়েছেন মিকেল আরতেতা। ১৩ রাউন্ড শেষে লিগের সেরা রক্ষণের দল গানাররা, হজম করেছে মাত্র ১০ গোল।

তৃতীয় স্থানে থাকা লিভারপুলের জালে ঢুকেছে ১১ গোল। ইয়ুর্গেন ক্লপের দল লিগের প্রথম এক-তৃতীয়াংশে মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছে। তা–ও টটেনহামের বিপক্ষে ৯ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর, যোগ করা সময়ে আত্মঘাতী গোলে। সমস্যা হচ্ছে লিভারপুল এবার প্রায় নিয়মিতভাবেই প্রথমে গোল খাচ্ছে ও পরে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখছে। এভাবে লিভারপুল কত দিন চালিয়ে যেতে পারবে কে জানে!

গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টার সিটি বিপক্ষেও প্রথমে গোল খেয়ে শেষ পর্যন্ত ১–১ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে লিভারপুল। যা এবারের মৌসুমে প্রথমে গোল খাওয়ার পর লিভারপুলের অন্তত ১ পয়েন্ট পাওয়ার ষষ্ঠ ঘটনা। প্রথমে পিছিয়ে যাওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়িয়ে পয়েন্ট তোলায়ও (১২) লিভারপুলই সবার চেয়ে এগিয়ে। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে, ইয়ুর্গেন ক্লপের দলটির হাল না ছেড়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা এখন বেশ উঁচুতে।

লিভারপুল, আর্সেনাল আর সিটির পাশাপাশি শিরোপার লড়াইয়ে নিজেদের ধরে রেখেছে অ্যাস্টন ভিলাও। দলটিকে অনেকেই হয়তো টটেনহামের মতোই মনে করেন, যাঁরা খুব বেশি দিন নিজেদের দম ধরে রাখতে পারে না। তবে ৯ ম্যাচের ৭টিতে জিতে সেরা চারে অবস্থান ধরে রাখাটাও চাট্টিখানি কথা নয়। উনাই এমেরির দলকে তাই শিগগিরই লড়াই থেকে ছিটকে দেওয়া সহজ হবে না।

মাত্র ২ পয়েন্ট ব্যবধানের প্রথম চার দলের বাইরেও কিন্তু জমজমাট লড়াই চলছে। পাঁচ থেকে আটের মধ্যে থাকা টটেনহাম, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, নিউক্যাসল ও ব্রাইটনের মধ্যে ব্যবধান কিন্তু মাত্র ৬ পয়েন্টের, যারা সবাই চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

লিগে এখনো প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ পথ বাকি। হতে পারে সামনের কয়েক মাসে আর্সেনাল ১-০–এর মতো ছোট ব্যবধানে আর জিততে পারবে না, লিভারপুল প্রথমে গোল হজম করলে সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবে না, সিটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে চাপে ভেঙে যাবে, কিংবা অ্যাস্টন ভিলাও তাদের ভালো খেলার দম দীর্ঘায়িত করতে পারবে না।
তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এবং জমজমাট প্রিমিয়ার লিগে দেখার আশা করার যথেষ্টই কারণ আছে। সেটা দলগুলোর পয়েন্টের বর্তমান, ট্রফিজয়ী দলের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য আর লিগের প্রবণতার নানা তথ্যই বলছে।

সম্পর্কিত খবর

শ্রীলঙ্কার সমালোচনা করতে বাংলাদেশের সমর্থকদের টানলেন রমিজ

Shopnamoy Pronoy

দ্বিতীয়বার কিয়েভ সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

gmtnews

মুজিবনগর সরকারের চারশ’ টাকা বেতনের চাকুরে ছিলেন জিয়া: তথ্যমন্ত্রী

gmtnews

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত