রিপাবলিকান পার্টির টিকিটে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চান। নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে এখন তিনি জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প যদি আবার হোয়াইট হাউসে ফেরেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অবস্থা কী হবে? তিনি কি অভিবাসীদের গণহারে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করবেন? রাজনৈতিক বদলা নেবেন? বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন? নতুন এক স্বর্ণযুগের সূচনা করবেন?—এমন নানা সব প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ট্রাম্প নিজ দেশ ও বিশ্বের জন্য কী কী করার পরিকল্পনা করছেন, সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।
গণহারে বিতাড়িত করা
নভেম্বরের নির্বাচনে বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস লড়বেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। তাঁর প্রতিপক্ষ ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান শুরু করবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই এ অভিযান শুরুর পরিকল্পনা আছে তাঁর।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব, তাদের বের করে দেব।’ ট্রাম্পের দাবি, অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রকে কলুষিত করছেন।
ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তদেয়াল প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। তবে মেয়াদকালে প্রকল্পটি শেষ করতে পারেননি তিনি। ট্রাম্প বলেন, এবার প্রেসিডেন্ট হলে এই কাজে তিনি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে চান। এ ছাড়া অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি আটককেন্দ্রও খুলতে চান।
নির্বাচনী প্রচারের এক ভিডিওতে ট্রাম্প বলেন, নতুন মেয়াদে দায়িত্বের প্রথম দিনই তিনি অবৈধ অভিবাসীবিরোধী নির্বাহী আদেশে সই করবেন। এই আদেশের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ সন্তানেরা যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়ে না যায়, তা তিনি নিশ্চিত করবেন।
বেশ কয়েকটি মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে রাখতে তিনি এমন পরিকল্পনা করছেন।
জলবায়ু চুক্তি
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদকালে যুক্তরাষ্ট্রকে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। পরে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র আবার এই চুক্তিতে ফেরে।
ট্রাম্পের প্রচারশিবির বলছে, রিপাবলিকান এই নেতা প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছেন।
এক সমাবেশে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের বলেন, তিনি বাইডেন প্রশাসনের করা অযথা খরচ বন্ধ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রুত তহবিলও বাতিল করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
উইসকনসিনে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, তিনি কুটিল বাইডেনের জারি করা বৈদ্যুতিক গাড়িসংক্রান্ত পাগলাটে আদেশ বাতিল করবেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, এতে জ্বালানি খরচ খুব দ্রুত কমে আসবে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বালানি খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি
যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের ‘বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির’ রাজধানী করার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি ধনকুবের ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ককে সরকারি অপচয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব দিতে চান তিনি।
সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারক কোম্পানিগুলোকে, এমনকি ধীরে ধীরে তাদের গ্রাহকদেরও আমদানির জন্য শুল্ক দিতে হবে। তবে রপ্তানিকারক কোম্পানির জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
ট্রাম্প বলেন, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও ব্যবসায়িক শ্রেণির করের হার কমাতে উদ্যোগ নেবেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক বাণিজ্যযুদ্ধ হয়েছিল। ট্রাম্প চান, আবার ক্ষমতায় গেলে এশিয়ার জায়ান্ট চীনের ‘মোস্ট ফেবার্ড নেশন’ মর্যাদা প্রত্যাহার করতে।
গর্ভপাতের অধিকার
সুযোগ পেলেই ট্রাম্প বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকার সংকুচিত হয়ে আসার পেছনে তাঁর আংশিক কৃতিত্ব আছে। তিনি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে তিনজন রক্ষণশীল বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি তাঁদেরও আংশিক কৃতিত্ব দেন। তবে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাঁর অবস্থান অস্পষ্ট।
দেশজুড়ে গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এই রিপাবলিকান উঠেপড়ে লেগেছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কট্টরপন্থীরা ট্রাম্পকে সমর্থন দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা আপনাদের মনের কথা শুনুন। তবে মনে রাখবেন, আপনাদের নির্বাচনে জয়ী হতে হবে।’
সাবেক এই প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, নারী ও তাঁদের প্রজনন–অধিকারের বিষয়ে তাঁর প্রশাসন দারুণ ভূমিকা রাখবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পরিকল্পনা
ট্রাম্প কয়েক মাস ধরে বলে আসছেন, তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে পারেন। তবে কীভাবে তা সম্ভব, সে ব্যাখ্যা দেননি ট্রাম্প।
সমালোচকেরা বলছেন, ট্রাম্প হয়তো ২০১৪ ও ২০২২ সালে অবৈধভাবে রাশিয়ার দখল করা ইউক্রনীয় এলাকার দাবি ছেড়ে দিতে কিয়েভকে চাপ দেওয়ার কথা ভাবছেন।
এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়াকে কীভাবে থামানো যাবে, সে ব্যাপারে খুব নিখুঁত একটি পরিকল্পনা তাঁর কাছে আছে।
তবে ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনাগুলো প্রকাশ করতে রাজি নন। তিনি এ ক্ষেত্রে চমক রাখতে চান।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘তবে আমি আপনাদের ওই পরিকল্পনাগুলো জানাতে পারছি না। কারণ, আমি যদি আপনাদের পরিকল্পনাগুলো জানিয়ে দিই, তাহলে আমি এগুলো ব্যবহার করতে পারব না।’
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এই সংঘাত শুরুর পর ট্রাম্প নিজেকে ইসরায়েলের নিঃশর্ত সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু পরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে তাঁকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসরায়েল যে কায়দায় কাজ করছে, তা তিনি পছন্দ করছেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন।