জয় দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজর শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামীকাল মুখোমুখি হবে দুই দল।
বিকেল ৩টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বেসরকারী টেলিভিশন গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয় করে বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে টি-২০ সিরিজ শুরু করাটা যে কঠিন হবে তা বেশ ভাল ভাবেই জানে টাইগাররা। এছাড়া ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের পরাজয় স্বাগতিকদের প্রেরনা বাড়িয়ে নেয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদুপরি সক্ষিপ্ত ভার্সনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের অতীত রেকর্ডও খুব একটা সুখকর নয়।
এর আগে ছয়বারের মোকাবেলায় বাংলাদেশ মাত্র দুটিতে জয় পেয়েছে। বাকী চারটিতেই হেরে গেছে। তন্মধ্যে আবার আফগানিস্তানের হোম ভেন্যু হিসেবে ভারতের হায়দ্রাবাদে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশও হয়েছিল টাইগাররা।
সর্বশেষ একটি ত্রিদেশীয় সিরিজে পরস্পরের মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় দল হিসেবে অংশ নেয় জিম্বাবুয়ে। দুই লেগের ওই সিরিজের প্রথম ম্যাচে মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তান বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫ রানে জয়লাভ করলেও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফিরতি লেগে চার উইকেটে পরাজিত হয়। শেষ পর্যন্ত এই দুই দল ফাইনাল নিশ্চিত করলেও বৃস্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষনা করা হয় দুই দলকে।
সেই হিসেবে এই ফর্মেটের সর্বশেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলেও মিরপুরে সর্বশেষ ম্যাচে জয়ের রেকর্ড আছে আফগানদের। এই ভেন্যুতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মত শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয়লাভ করলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে গত বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ।
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় মিরপুরের ভেন্যুতে এশীয় প্রতিপক্ষ সব সময় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থেকেছে।
সুতরাং চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও মিরপুরে টি-২০ সিরিজটি কঠিন হতে পারে বাংলাদেশ দলের জন্য। যদিও এই বছরের শেষভাগে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আরো উন্নতির অপেক্ষায় রয়েছে টাইগাররা।
বিশেষ করে বাংলাদেশ টি-২০ ক্রিকেটের প্রথম পাওয়ার প্লেতে আরো উন্নতি করতে চায়। তবে এ ক্ষেত্রে (পাওয়ার প্লে) বার বার বাংলাদেশের দুর্বলতার প্রমান মিলেছে। টাইগার দলের টি-২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ বলেছেন, এবার বাংলাদেশ আগে থেকেই এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ রেখে মাঠে নামবে, লক্ষ্য থাকবে প্রথম ছয় ওভার থেকে অন্তত ৪০/ ৪৫ রান সংগ্রহ করা।
তিনি বলেন,‘ এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আমাদের উন্নতি করা উচিৎ। আমরা জানি সামনেই টি-২০ বিশ্বকাপ। সুতরাং এ ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে না পারলে আমাদেরকে গভীর সঙ্কটে পড়তে হবে। তাই পাওয়ার প্লে থেকেই ভাল করাটা আমাদের প্রথম লক্ষ্য থাকবে।
অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা মুনিম শাহরিয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, প্রথম পাওয়ার প্লের প্রথম বল থেকেই শট খেলার মত দক্ষতা তার মধ্যে রয়েছে।’
শাহরিয়ারের বড় স্কোর না থাকলেও সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সাহসী সব শট খেলে তিনি প্রমান করেছেন, এই ফর্মেটের জন্য এমন খেলোয়াড়কেই খুঁজে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। বিপিলে ১৫২ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি। ফরচুন বরিশালকে প্রতি ম্যাচের পাওয়ার প্লেতেই প্রতিপক্ষের নাগালের বাইরে নিয়ে গেছেন তিনি।
রিয়াদ বলেন,‘ আগামীকাল শাহরিয়ারের অভিষেক হওয়ার সম্ভাবন প্রবল।’ শুরু থেকেই বোলারদের সাবলীলভাবে মোকাবেলা করার মত দক্ষতা তার আছে বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তবে আসন্ন ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য দু:সংবাদ হচ্ছে পুরনো শত্রু রশিদ খান তার ফর্ম ফিরে পেয়েছেন। চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৩৭ রানে তিন উইকেট শিকার করেছেন তিনি। পেস সহায়ক উইকেটেও তিন উইকেট শিকার করেছেন রশিদ। আফগানিস্তানের অন্য স্পিনারদের পাশাপাশি রশিদকে কাবু করার জন্য চট্টগ্রামের উইকেট বানিয়েছিল স্বাগতিকরা।
মিরপুরের উইকেট ধীরগতির হওয়ায় শতভাগ সুবিধা আদায় করার সম্ভাবনা রয়েছে রশিদ, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবীদের। তবে মাহমুদুল্লাহ বলেছেন, এই ফর্মেটে নিজেদের চেনানোর জন্য জন্য বাংলাদেশ নির্ভীক ক্রিকেট খেলবে।
সংক্ষিপ্ত ভার্সনে এ পর্যন্ত ১২৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে ৪৩টিতে জয়লাভ করলেও হেরে গেছে ৭৮ ম্যাচে। দুই ম্যাচে কোন ফলাফল হয়নি।
স্কোয়াড
বাংলাদেশ: মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, মুনিম শাহরিয়ার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, মাহেদী হাসান, ইয়াসির আলী চৌধুরী, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, শহিদুল ইসলাম, নাইম শেখ।
আফগানিস্তান: রহমানুল্লাহ গুরবাজ, হজরতুল্লাহ জাজাই, উসমান গনি, দরবেশ রাসুলি, মোহাম্মদ নবী (অধিনায়ক), নাজিব জাদরান, আফসার জাজাই, করিম জানাত, আজমাতুল্লাহ ওমরজাই, শরফুদ্দিন আশরাফ, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, কায়েস আহমেদ, ফজল হক ফারুকী, নিজাম। মাসউদ, ফরিদ আহমাদ ।