যে বাবর আজম মাত্র ১৫ বছর বয়সে নেটে শোয়েব আখতারের বোলিং মোকাবেলা করেছিলেন। সেই বাবরই দুবাইয়ে চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে চির প্রতিদ্বন্দ্বি ভারতকে হারিয়ে জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছেন। তার আগে টি-২০ ক্রিকেটে ব্যাটার র্যাংকিংয়ের শীর্ষ স্থানটি দখলে নিয়েছেন।
তবে ভারতকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয়ার পর পাকিস্তানি ক্রিকেট অধিনায়ককে ‘জহির উদ্দিন বাবর’ হিসেবে অভিহিত করতে থাকেন ধারাভাষ্যকাররা। যিনি ষোল শত শতাব্দিতে মোগল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং শাসন করেছেন ভারতবর্ষ।
পাকিস্তানের জন্য ভাল বিষয়টা হচ্ছে এত কিছুর পরই ২৭ বছর বয়সি বাবর মাটিতেই রাখছেন। আসরে গ্রুপ পর্বের ৫ ম্যাচের সবকটিতেই পাকিস্তানকে জয় এনে দিয়েছেন তিনি। এখন সেমি-ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। ইতোমধ্যে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ২৬৪ রান সংগ্রহ করেছেন পাক অধিনায়ক। গত রোববার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বাবর। আসরে এটি ছিল তার চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন অপরাজিত ৬৮ রান।
ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে সতীর্থ ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান করেছিলেন অপরাজিত ৭৯ রান। তাদের এ ব্যাটিং নৈপুন্যে চির প্রতিদ্বন্দ্বি ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ১৩ বারের প্রচেষ্টায় প্রথম জয় এনে দিয়েছিল পাকিস্তানকে।
শুধু ভারতের বিপক্ষে নয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫১ এবং নামিবিয়ার বিপক্ষে ৭০ রান সংগ্রহ করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর। অসাধারণ এই ইনিংস তাকে ফের টি-২০ ক্রিকেটের র্যাকিংয়ের শীর্ষস্থান ফিরিয়ে দিয়েছে। বাবর বলেন, ‘এটি অবশ্যই গর্ব করার মত মুহুর্ত। এই সফলতার মুলে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও লক্ষ্যে অবিচলতা। আমি দিনের পর দিন আরো উন্নতি করতে চাই।’
চলতি বছর এপ্রিলে ওয়ানডে ক্রিকেটে শীর্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির তিন বছরের টানা আধিপত্যের অবসান ঘটিয়েছিলেন বাবর আজম। দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে তিনি যথাক্রমে ১০৩, ৩২ ও ৯৪ রান করেছিলেন। সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে পাকিস্তান। শিশুকাল থেকেই আলো ছড়ানো শুরু করা বাবর ইউটিউবে আঁচড় কেটেছেন ১৩ বছর বয়সে।
২০০৭ সালে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বল বয়ের দায়িত্ব পালনকালে দক্ষিন আফ্রিকার জেপি ডুমিনির বলে বিশাল এক ছক্কা হাকিয়ে বসেছিলেন। বলটি লং অন দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন তিনি। তার ওই ব্যাটিংয়ের স্লো মোশন রিপ্লে দেখে প্রশংসা করেন ধারাভাষ্যকাররা। ছেলের অসাধারন মেধা প্রমানিত হবার পরও বাবরের পিতা আজম সিদ্দিকির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল টিনএজ আজম নিজে থেকে খুব বেশী দূর এগুতে পারবে না।
বাবর বলেন,‘ আমার জন্য আশীর্বাদের বিষয় হচ্ছে, আমার বাবা আমাকে যথেষ্ট সমর্থন দিয়ে গেছেন। সত্যিকার অর্থে তিনি এখনো আমাকে ভাল না খেললে, কিংবা বাজে শট খেললে তিরস্কার করেন। অনুর্ধ-১৫ ও অনুর্ধ-১৯ পর্যায়ে দারুন সব শট খেলে সবার দৃস্টি আকর্ষন করেছেন তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার মুদাস্সর নাজার ১৯৯৯ সালে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির দায়িত্বরত অবস্থায় তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বাবর অতীতের ঘটনা স্মরণ করে বলেন,‘ ১৫ বছর বয়সে আমি যখন অনুর্ধ-১৫ ক্যাম্পে, তখন একদিন জাতীয় দলের অনুশীলনে আমাদের আমন্ত্রন জানানো হয়। আর মুদাস্সর আমাকে শোয়েবের বোলিংয়ের মোকাবেলার সুযোগ দেন।’
২০০৩ বিশ্বকাপে দ্রততম গতির বল করে ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ খেতাব লাভ করেছিলেন শোয়েব আখতার। তার বলের গতি ছিল ঘন্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার। বাবর বলেন,‘ শোয়েব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই ছেলে তোমাকে বল প্রতিহত করতে হবে। আমি উপরে বল করব। দুই তিনটা ডেলিভারির পর আমি তাকে ড্রাইভ করি।
তিনি কিছুটা বিরক্ত হন এবং নতুন বল দিতে বলেন। যেটি দিয়ে তিনি বাউন্সার করেন। তখন আমি হাসফাস করে আশেপাশে তাকাতে তাকি। পরে নেটের বাইরে থেকে মোদাস্সর আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান।’
অবসরে যাওয়া শোয়েব গত বছর আমার ওই ব্যাটিংয়ের কথা স্মরন করেন। তিনি বলেন,‘ তখন থেকেই সে মেধাবি ছিল। এখনো তেমনই আছে। নেটে সে আমাকে আগ্রাসী ব্যাট করেছিল।’
পাকিস্তানের টি-২০ সুপার লিগে কোচের দায়িত্ব পালন করা অস্ট্রেলিয় অল রাউন্ডার টম মুডির বিশ্বাস বাবর বড় একজন তারকা হবেন। এমনকি ছাড়িয়ে যাবেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে। গত বছর তিনি বলেছিলেন,‘ তোমরা মনে কর কোহরি ভালো। বাবর আজমের ব্যাটিং দেখ। বাবরকে আমি প্রায় কোহলির মতই মনে করি। ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলি কিভাবে এমন সাবলীল ব্যাট করে আমরা সেটি নিয়ে কথা বলি। তবে যদি কোহলির খেলা দেখতে ভাল লাগে তাহলে বাবর আজমের খেলার দিকেও তাকাও। তার মধ্যেও আলাদা কিছু আছে।’