বিশ্বের বৃহত্তম প্রদর্শনী ওয়ার্ল্ড এক্সপো, ২০২০ দুবাইয়ের বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। শুক্রবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্যাভেলিয়নের উদ্বোধন করেন।
প্রথমবারের মত বাংলাদেশ নিজস্ব প্যাভেলিয়নে ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে অংশগ্রহণ করলো। ছয় মাসব্যাপী এই প্রদর্শনী চলবে আগামীবছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এবং ইতিহাস ও এতিহ্যকে প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে প্যাভেলিয়নের কনফারেন্স রুমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ : বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক গন্তব্য’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন, এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশনের সভাপতি ও আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহাতাবুর রহমান নাসির, মার্কিন প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান কালীপ্রদীপ চৌধুরী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিলারা আফরোজ খান মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন।
টিপু মুনশি তার বক্তব্যে প্রবাসীদেরকে মাতৃভূমি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ উপযোগি পরিবেশ বিরাজ করছে। আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ঈর্ষনীয়। পাশর্^বর্তী দেশের তুলনায় আমরা এগিয়ে গেছি। আপনারা বিনিয়োগ নিয়ে আসুন, সরকার আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’
প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন,‘প্রবাসীদের বিনিয়োগ আরও সহজ করার জন্য কোন প্রস্তাব যদি আপনাদের থাকে, সেটি নিয়ে আসুন। সরকার সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়।গত ৫০ বছরে কতটা এগিয়েছে, সেসব সাফল্য দুবাই এক্সপোর মাধ্যমে বিশ^বাসীকে জানানো হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পাশাপাশি কর্মসৃজন কার্যক্রমে বিনিয়োগের আহবান জানান। তিনি বলেন,‘রেমিটেন্স পাঠিয়ে বাড়ি বানানো কিন্তু বিনিয়োগ নয়। এমনখাতে আপনারা বিনিয়োগ করুন, যেখানে কর্মসংস্থান তৈরি হয়। দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের যে প্রবৃদ্ধি-তাতে বুঝা যায়, সেখানে বিনিয়োগ পরিবেশ কেমন। বিনিয়োগের দারুণ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সরকার নীতি-সহায়তা দিচ্ছে। আপনার তার ব্যবহার করুন।’
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, এবারের এক্সপোতে কেবল রপ্তানি বা বাণিজ্যের কথা বলা হবে না। দেশের
ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বাংলাদেশীরা যে একটি মানবিক জাতি সেসব বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হবে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আগামী ছয়মাসে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে শক্তিশালীভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় আরব-আমিরাত সরকার ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো,২০২০ দুবাই’ এর উদ্বোধন করে। ১৯২টি দেশ এবারের এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্য,আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রথমবারের মত এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে ইটালির মিলানে ওয়ার্ল্ড এক্সপো অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের দ্বিতল প্যাভিলিয়রে ৪৩৬ বর্গমিটার জায়গায় ডিজিটাল প্রদর্শনী ছাড়াও রয়েছে অফিস, কনফারেন্স রুম, বি টু বি মিটিং হল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নকে সাজানো হয়েছে। পণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্ষকে সেখানে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন এক্সিবিশন টাইটেল নির্ধারণ করা হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’।