ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে মেগা প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অর্থনৈতিকভাবে যেসব প্রকল্প লাভজনক সে অনুযায়ী নতুন আরও মেগা প্রকল্প নেওয়ার কথাও জানিয়েছে দলটি।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগান নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্য সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার তিন মেয়াদে দুই ডজনের বেশি মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে।
এক্ষেত্রে বিগত আমলের উন্নয়ন ও অগগ্রতি তুলে ধরে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দেশের জাতীয় গৌরব ও গর্বের প্রতীক হয়ে যেমন উঠেছে, তেমনি এই সেতু এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হচ্ছে। আর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩.৩২ কিলোমিটার টানেল নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করে। এর ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে।
দেশের উন্নয়নের পথে সড়ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামোর অভাব সবচেয়ে বড় বাধা জানিয়ে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা বহুমুখী সেতুর সঙ্গে যুক্ত রেলপথ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগের আওতায় এসেছে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করে দেশকে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণও করে তুলেছে সরকার।
ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকা মেট্রোরেল সবচেয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হয়ে উঠবে। এটি রাজধানীবাসীকে শুধু অসহনীয় যানজট থেকেই মুক্তি আনবে না, একইসঙ্গে অর্থনৈতিক গতিশীলতাও বাড়াবে।
অন্যদিকে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ খাত আরও এক ধাপ অগ্রসর হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে।
ইশতেহারে আরও উঠে এসেছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা-ফার্মগেট অংশের উদ্বোধনের প্রসঙ্গও। উঠে এসেছে চলতি বছরের ১১ নভেম্বর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলের উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর যুগে প্রবেশের কথাও ।
ইশতেহারে বলা হয়, এ বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধনে সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে প্রথমবার ট্রেন পৌঁছে যায়। এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
রেলের অপর প্রকল্প খুলনা-মোংলা রেলপথের মাধ্যমে দেশের রেল সংযোগে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর।
ইশতেহারে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর এবং ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লির প্রেসার ভেসেল উদ্বোধন করা হয়, যা বাংলাদেশকে পারমাণবিক ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
মেগা প্রকল্পের এসব অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারে বলেছে, সাশ্রয়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় কিছু সংখ্যক ব্যয়বহুল প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে, যা যথাসময়ে পুনর্বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নতুন প্রকল্প বিবেচনা ও গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
যদিও বুলেট ট্রেনের মত উচ্চভিলাষী প্রকল্প হাতে নিলেও তা বাতিল করা হয়েছে। ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
অন্যদিকে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার ঢাকা পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড হাইওয়ে নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। যদিও এই প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা বাবদ ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ও করা হয়।
মেগা প্রকল্পের বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, সরকারের উন্নয়ন দর্শনের পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে।
রেলের এসব প্রকল্পকে ফরমায়েশী মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে সুশাসনের লক্ষণ নেই। সরকার যে সময় পেয়েছিল সেখানে সুন্দর সুশৃঙ্খল উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি।
নগর পরিবহন বাস্তবায়নে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্প গত ১৩ বছরেও দেখেনি আলোর মুখ। সরকারি সংস্থা ডিটিসিএর সমন্বয়ে ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নেওয়া ঢাকা নগর পরিবহন প্রকল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে এক বছরেই।
এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপদ সড়কের অধিকার আমরা পেলাম না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে সড়কে। অথচ এই সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও পরিকল্পিত ও নিরাপদ সড়ক করতে ব্যর্থ হয়েছে।