অর্থনৈতিক রিপোর্টার বাংলাদেশের জন্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিষদের সভায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ গত জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে।
গত ফেব্রুয়ারির শুরুতেই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে পুরো ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। আলোচ্য প্যাকেজে দুই ধরনের ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা বা বর্ধিত তহবিল (ইসিএফ অ্যান্ড ইএফএফ) থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার।
২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তিতে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় ৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং আরএসএফের আওতায় ২১ কোটি ৯০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। এদিকে শর্ত অনুযায়ী জুনভিত্তিক রাজস্ব সংগ্রহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংগ্রহ না হওয়ায় দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ে প্রথম দিকে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে অক্টোবরে ঢাকা সফরে আসা আইএমএফের মিশনকে সরকার ওই দুটি শর্ত পালন না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়।
এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি থাকায় দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেবে বলে সরকারকে তখন প্রতিশ্রুতি দেয় মিশন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিশনকে জানানো হয়, অন্যান্য শর্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে দুটি শর্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে নির্বাচনের পর এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই কারণ দেখিয়ে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণে মার্চ পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়।
অন্যান্য শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে গত ১৯ অক্টোবর বিবৃতিতে আইএমএফ মিশন জানায়, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য প্রথম পর্যালোচনা শেষ করতে বিভিন্ন নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। প্রথম পর্যালোচনা শেষ হলে বাংলাদেশ দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পাবে। তবে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুন শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা ছিল।
কিন্তু ওই সময়ে দেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এখন ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় হবে ডিসেম্বরভিত্তিক অগ্রগতির ওপর। ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতে পারে সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয় আইএমএফ। কিন্তু বছর শেষে সে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পিছিয়ে ছিল এনবিআর। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।