অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
খেলা ফুটবল সর্বশেষ

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া দলের ভেতর–বাহির

কাতার বিশ্বকাপ শুরুর ছয় মাস আগে ছাঁটাইয়ের শঙ্কায় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কোচ গ্রাহাম আরনল্ড, সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার সুযোগ হারিয়ে তখন প্লে–অফের লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল দলটিকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ঠিকই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। আর বিশ্বকাপ দিয়ে গোটা পরিস্থিতিই বদলে দিয়েছেন আরনল্ড। পরে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তিও বাড়ানো হয়েছে তাঁর। আর এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করার অপেক্ষায় আরনল্ড। এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবেচয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচে কোচিং করানোর রেকর্ডটি হবে তাঁর (৫৯)। যেখানে তিনি টপকে যাবেন সাবেক কোচ ফ্রাঙ্ক ফারিনাকে।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের নতুন এই অভিযান শুরুর আগে ১৩ নভেম্বর বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করেছে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল। ১৯৭৩ সালে কোরিয়ার বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে আচমকা শটে জিমি ম্যাককিয়ের করা বিস্ময়কর এক গোল অস্ট্রেলিয়াকে এনে দেয় ১৯৭৪ বিশ্বকাপের টিকিট। এরপর অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও প্রায় ৩২ বছর। ২০০৬ সালে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলে সকারুরা। সেই থেকে অবশ্য আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের প্রতিটি বিশ্বকাপে খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত উপহার দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় পরাশক্তিদের চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছিল তারা।

তবে এবার ভিন্ন এক পথ পাড়ি দিয়েই বিশ্বকাপে জায়গা পেতে হবে অস্ট্রেলিয়ার। বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসায় কিছুটা সুবিধাও অবশ্য পাবে দলটি। ২০২৬ বিশ্বকাপে দেখা যাবে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন। ৩২ দলের পরিবর্তে যেখানে খেলবে ৪৮ দল, যা অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার দলগুলোকে বেশ সুবিধা দেবে। এশিয়া থেকে এখন ৪ দলের পরিবর্তে ৮ দল সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবে। আর একটি দলকে পেরোতে হবে প্লে–অফের বাধা। যদিও সেই ম্যাচ খেলতে হবে অন্য কনফেডারেশনের দলের সঙ্গে।

বাছাইপর্বে অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দলগুলো হলো লেবানন ও ফিলিস্তিন। পরের ধাপে যেতে হলে চার দলের গ্রুপে শীর্ষ দুইয়ে থাকতেই হবে। যারা একই সঙ্গে সৌদি আরবে অনুষ্ঠেয় ২০২৭ এশিয়ান কাপেরও টিকিট পাবে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ধাপে অস্ট্রেলিয়া প্রথম দুটি ম্যাচ খেলবে চলতি মাসে। পরের দুই ম্যাচ ২০২৪ সালের মার্চে, আর পরের দুই ম্যাচ জুনে।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এবার ভিন্ন এক অস্ট্রেলিয়া দলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কাতার বিশ্বকাপের দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছিল গ্রাহাম আরনল্ডের দলটি। তবে বিশ্বকাপের পরের সময়েও এই দলে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। যেখানে আছে কিছু চমকও।

বিশ্বকাপের সময়টাতেই আগে ফিরে যাওয়া যাক। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই প্রায় চমকে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ফ্রান্সের বিপক্ষে ক্রেইগ গুডউইনের গোলে শুরুতেই এগিয়ে যায় সকারুরা। শেষ পর্যন্ত ৪–১ গোলে হেরে গেলেও প্রশংসিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার খেলা। ফ্রান্সের সঙ্গে না পারলেও ২০২০ ইউরোর সেমিফাইনালিস্ট ডেনমার্ক ও তিউনিসিয়াকে ঠিকই হারিয়ে দেয় তারা। দুই দলের বিপক্ষেই অস্ট্রেলিয়ার জয় ১-০ গোলে।

গ্রুপ পর্বের এই নেপুণ্য দিয়েই মূলত ইতিহাস গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এর আগে কখনোই গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচে জিততে পারেনি তারা। এমনকি দুই ম্যাচে ক্লিন শিট রাখার ঘটনাও ছিল প্রথম। ১৯৭৪ সালের পর তারা কখনোই আর গোলবার অক্ষত রাখতে পারেনি। এ ছাড়া ডেনমার্কের বিপক্ষে জয়টাও ভিন্ন এক দিক থেকে ঐতিহাসিক ছিল অস্ট্রেলিয়ার জন্য। অস্ট্রেলিয়া সেবারই প্রথম র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে থাকা কোনো দলকে হারানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছিল।

গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর্জেন্টিনার। লিওনেল মেসির দলকে অবশ্য খুব সহজে ছেড়ে দেয়নি তাসমান দেশটি। শুরুতে দুই গোল হজম করলেও ৭৭ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজের আত্মঘাতী গোলে ব্যবধান কমে। যোগ করা সময়ে দলের তরুণ তুর্কি গারাং কোল সমতা ফেরানোর কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি হারে ২–১ গোলে।

দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে হেরে ফিরে গেলেও অস্ট্রেলিয়ার খেলা দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল। বিশেষ করে কোচ আরন্ডলের ‘অজি স্পিরিট’–এর প্রদর্শনী অনেককেই মুগ্ধ করেছিল। সে সময় লেকিপের মতো বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম বলেছিল, আরনল্ডই বিশ্বকাপের সেরা কোচ। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দিয়ে র‍্যাঙ্কিংয়েও দারুণ উন্নতি করে। ১১ ধাপ এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া উঠে আসে ২৭ নম্বরে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের (২৫তম) পর ছিল সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিং।

বিশ্বকাপের পর অবশ্য আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচগুলোতে অম্লমধুর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। যেখানে একাধিক বিশ্ব মানের দলের বিপক্ষেও খেলেছে দলটি। ইকুয়েডরের বিপক্ষে গত মার্চে দুই ম্যাচ খেলে একটি জিতলেও অন্যটি হেরেছে। এরপর বেইজিংয়ে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হার ২–০ গোলে। মেক্সিকোর সঙ্গে ২–২ গোলে ড্র। শেষ দুই ম্যাচের প্রথমটিতে র‍্যাঙ্কিংয়ের চারে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১–০ গোলে হারলেও তাসমান প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ২–০ গোলে।

বিশ্বকাপের পর এই ছয় মাসকে অবশ্য নিরীক্ষার জন্যই বেছে নিয়েছিলেন আরনল্ড। এই ম্যাচগুলোতে দলকে নানাভাবে বাজিয়ে দেখার চেষ্টা করেন তিনি। যে কারণে অনেক সময় আপস করতে হয়েছে ফলের সঙ্গেও। তবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর সে পথে হাঁটতে চান না সকারুস কোচ। বাংলাদেশের বিপক্ষে কাল শুরু থেকেই জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়া। গত সপ্তাহে আরনল্ড বলেছেন, ‘গত ছয় মাসে আমাদের সুযোগ ছিল নিজেদের পরীক্ষা–নিরীক্ষার। কিন্তু এখন এটা বিশ্বকাপ বাছাই। আমার মনে হয় নিরীক্ষার সময় শেষ। এখন আমরা সঠিক কৌশলে সঠিক খেলোয়াড়দের খেলাব। যেকোনো মূল্যে ম্যাচগুলো জিততে চাইব।’

বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ঘোষিত দলেও খুব বেশি পরিবর্তন আনেনি অস্ট্রেলিয়া। গত মাসে প্রীতি ম্যাচের দল থেকে মাত্র চারটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডিফেন্ডার মিলোস ডেগেনেক, গোলরক্ষক টম গ্লোভার, উইঙ্গার ওয়ের মাবিল এবং অন্য গোলরক্ষক অ্যান্ড্রু রেডমায়নেকে দল থেকে বাদ পড়েছেন। বরাবরের মতো এবারও স্কোয়াডে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় রেখেছেন আরনল্ড। অবশ্য কাতার বিশ্বকাপকে বিবেচনায় নিলে পরিবর্তনটা বিশালই বলতে হয়।

এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচের কম খেলেছেন এমন অনেক খেলোয়াড়কেও অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান দলটিতে রেখেছেন আরনল্ড। এ ছাড়া কাতার বিশ্বকাপের দলে থাকা মাত্র ৯ জন খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই স্কোয়াডে। এর মধ্যে অবশ্য মিডফিল্ড তারকা অ্যারন মুই অবসর নিয়েছেন। অন্যদের মধ্যে নাথানিয়েল অ্যাটকিনসন এবং রিলে ম্যাকগ্রে দুজনই চোটে আক্রান্ত। আর বাকিরা বাদ পড়েছেন ফর্মের কারণে। যে তালিকায় গত বিশ্বকাপের বাছাইয়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আদিন হার্স্টিকও আছেন।

আরনল্ডের দল বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে অবশ্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে তিনি মূলত ভবিষ্যতে চোখ রেখেই দল গোছাচ্ছেন, যাদের ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্যই তৈরি করছেন। যে কারণে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে এমন সাতজন খেলোয়াড় আছেন, যাঁদের অভিষেক হয়েছে এ বছর।

এমনকি দুজন খেলোয়াড় পোর্টসমাউথ স্ট্রাইকার কুসিনি ইয়েনগি এবং চার্লটন অ্যাথলেটিকের গোলরক্ষক অ্যাশলে মায়নার্ড–ব্রিওয়ের আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়। ইয়েনগিকে দিয়ে আরনল্ড মূলত লম্বা সময় ধরে চলতে থাকা গোল করার সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন আরনল্ড। পাশাপাশি অবশ্য মিচ ডিউক, জেমি ম্যাকলারেন, ক্রেইগ গুডউইনের মতো অভিজ্ঞদেরও দলে রেখেছেন এই কোচ। বলে রাখা ভালো, অস্ট্রেলিয়ার এই স্কোয়াডের কোনো ফুটবলারই ইউরোপের শীর্ষ লিগে খেলেন না।

অভিজ্ঞদের ছায়াতেই ভবিষ্যতের তারকাদের গড়ে নেওয়ার পথে হাঁটছেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ। যেখানে তাঁর প্রথম চ্যালেঞ্জটা আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে। শক্তি–সামর্থ্য–পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে চ্যালেঞ্জটা সহজই। তাই শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ কিছু করতে হলে অলৌকিক কিছুর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে।

সম্পর্কিত খবর

পাকিস্তান ছাড়লেন ১ লাখ ৪০ হাজার আফগান

Hamid Ramim

এফএও’র ডিজিকে আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

gmtnews

বন্যাকবলিত এলাকার পরিস্থিতির উন্নতি, কমছে পানি

gmtnews

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত