অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
খেলা ফুটবল বিনোদন বিশ্ব সর্বশেষ

বিশ্বকাপ যেভাবে সৌদি আরবের পুনর্গঠনের চাবিকাঠি

বিশ্বকাপ আয়োজনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া তেল–শক্তি সৌদি আরবের জন্য অনস্বীকার্য জয়, যা দেশটির অর্থনীতিকে নতুন আকার দিতে ও প্রশ্নবিদ্ধ ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

২০১৮ সালে সৌদি এজেন্টদের হাতে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর সৌদি রাজতন্ত্র এড়িয়ে চলছিলেন পশ্চিমা নেতারা। মানবাধিকারবিষয়ক বিতর্কগুলো এখনো আছে। তবে একই সঙ্গে অগাধ তেলসম্পদের মাধ্যমে খেলাধুলায় লাগামহীন খরচের জন্য আলোচনায় এসেছে সৌদি রাজতন্ত্র।

প্রচারণা শুরুর ২৭ দিন পরই ২০৩৪ বিশ্বকাপের একমাত্র বিডার হয়েছে সৌদি আরব। এটি এমন সময়ে, যে বছরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও নেইমারের মতো শীর্ষস্থানীয় কিছু ফুটবল তারকাকে অখ্যাত সৌদি প্রো লিগে টেনে এনেছে তারা।

এ ছাড়া পেশাদার গলফে সৌদি আরবের কোনো অবস্থান না থাকার পরও দেশটির হঠাৎ গজানো এলআইভি গলফকে প্রভাব খাটিয়ে ইউএস পিজিএ এবং ইউরোপীয় ট্যুরগুলোর সঙ্গে একত্রীকরণ করেছে।

এসব সাফল্য বা অন্যান্য বিষয় শুধু ‘ভ্যানিটি প্রকল্প’ নয়। এগুলোর মূলে একটি গভীর রক্ষণশীল দেশের দিকে মনোযোগ, পর্যটক ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। ২০১৯ সালে সৌদি আরবকে অমুসলিম পর্যটকদের জন্যও উন্মুক্ত করা হয়েছে।
এটা বিস্ময়কর যে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের এক বছরের কম সময়ে মাঝেমধ্যে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা সৌদি আরবও তাদের অনুকরণ করছে।

 

বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প

প্যারিসের স্কেমা বিজনেস স্কুলের স্পোর্ট অ্যান্ড জিওপলিটিক্যাল ইকোনমির অধ্যাপক সাইন চ্যাডউইক এএফপিকে বলেন, ‘২০৩৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন এমবিএস (প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান) যুগের সৌদি আরবের রূপান্তর কর্মসূচির চূড়া চিহ্নিত করবে, যার মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক সমাজচ্যুতি থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিশ্বস্ত ও বৈধ সদস্য পর্যায়ে উঠে আসবে। এর মাধ্যমে ভাবমূর্তি, খ্যাতি, সফট–পাওয়ার এবং জাতি–ব্র্যান্ডিংয়ের সুবিধা পাবে তারা। পাশাপাশি কিছু অর্থনৈতিক লাভও পাওয়া যাবে, যা এমবিএস খেলাধুলা থেকে পেতে চান।’

বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার সময় সৌদি আরবে বেশ কয়েকটি বিশাল অবকাঠামোর প্রকল্প চলবে, যার মধ্যে আছে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের মেগা সিটি নিওম। এখানে পর্বত ও মরুভূমিজুড়ে ১৭০ কিলোমিটার (১০৫ মাইল) বিস্তৃত সমান্তরাল আকাশচুম্বী স্থাপনা থাকবে।

নিওম হচ্ছে প্রিন্স মোহাম্মদের ভিশন ২০৩০–এর ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ, যা অপরিশোধিত তেল থেকে অন্য শক্তির উৎসে যাওয়ার আগে বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশটির অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় করার উচ্চাভিলাষী প্রকল্প।

অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে আছে লোহিত সাগরে একটি পর্যটন গন্তব্য কিদ্দিয়া নামের একটি বিনোদন শহর, যেখানে থাকবে থিমপার্ক, খেলাধুলা ও অন্যান্য আকর্ষণ। এ ছাড়া দিরিয়া নামের একটি সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।

এরই মধ্যে রাজধানী রিয়াদে একটি বড় নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ চলছে। যার লক্ষ্য দুবাইয়ের সঙ্গে আঞ্চলিক বিমান চলাচল কেন্দ্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, নতুন এয়ারলাইন রিয়াদ এয়ারও উন্মোচন করা হয়েছে।

বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ফেলো ক্রিস্টিয়ান উলরিচসেন বলেন, বিশ্বকাপ হচ্ছে ভিশন ২০৩০–এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিলিয়ন ডলার প্রকল্পগুলোর সুশৃঙ্খল প্রদর্শনীর সুযোগ, যেগুলো তত দিনে চালু হয়ে যাবে এবং ব্যবসা, বিনিয়োগকারী ও পর্যটকদের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবের অবস্থান তৈরি করবে।

 

নিবিড় নজরদারি

২০৩০ সালের মধ্যে সৌদি আরবের জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ কোটি ও বছরে ১৫ কোটি পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। উলরিচসেন বলেন, ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো তাৎপর্যপূর্ণ এবং তা পূরণের জন্য মেগা ইভেন্টগুলোর স্থির প্রবাহ প্রয়োজন হবে। খেলাধুলায় এতটা প্রবলভাবে সম্পৃক্ত হওয়া, যেমনটি সম্প্রতি ফুটবল এবং গলফের পাশাপাশি ই–স্পোর্টস ও গেমিংয়েও দেখা গেছে, এটি পরিবর্তনশীল সৌদি আরবের গল্প বলার জন্য বিশ্বব্যপী ব্যাপক দর্শকের কাছে পৌঁছানোর একটি উপায়।

৪৮ দলের বিশ্বকাপের প্রথম একক আয়োজক হতে যাচ্ছে সৌদি আরব। তবে স্বল্প সংখ্যক বিশ্বমানের ভেন্যু এবং জোড়াতালি দেওয়া পরিবহন পরিকাঠামো নিয়ে দেশটিকে এখন সময়মতো প্রস্তুত হওয়ার চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।

আর এটিও নিঃসন্দেহ যে দেশটিকে স্পোর্টসওয়াশিংয়ের অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে। সমকামিতা, লিঙ্গবৈষম্য ও বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আইনসহ দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকেও আরও বেশি মনোযোগ থাকবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের।

এ বিষয়ে চ্যাডউইক বলেন, মেগা ইভেন্টের আয়োজন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়। সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হবে না। এ মুহূর্তে দেশটি টুর্নামেন্ট আয়োজন সক্ষম নয় যেমন এর পরিবহনব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো নয় এবং ভেন্যুও অপর্যাপ্ত। বিশ্বকাপের আয়োজন ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে শুরু হয়ে যায়। সৌদি আরবকে ২০৩৩ সালের শেষ দিকের মধ্যে অবশ্যই প্রস্তুত হতে হবে।

সম্পর্কিত খবর

তাদের মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা শোভা পায় না: কাদের

gmtnews

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃষ্টান্ত গড়বে

News Editor

বার্সার সামনে পুরোনো ‘শত্রু’

Shopnamoy Pronoy

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত