রাত নামলে অন্ধকার, খাবার ও পানির তীব্র সংকট। এর মধ্যে আকাশ থেকে পড়া বোমার আগুনে মৃত্যুভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সব সময়। বোমায় জ্বলছে বড় বড় ভবন, প্রাণ হারাচ্ছেন নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ। এমন এক বিভীষিকাময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজার ২২ লাখ মানুষের জীবন। তাঁদের পালানোর কোনো পথ নেই। নেই চিকিৎসার সুযোগ, এমনকি মৃত স্বজনকে সমাহিত করার জায়গাও এখন পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ছয় দিনে ৩৬৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার গাজায় ছয় হাজারের মতো বোমা নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। এগুলোর ওজন চার হাজার টন। শক্তিশালী এসব বোমার আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে গাজার অনেক আবাসিক এলাকা। তাতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও নিয়মিত বাড়ছে। এরই মধ্যে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ছয় হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের মধ্যে ৪৪৭ শিশু এবং ২৪৮ জন নারী।
গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে গাজার হাজার হাজার মানুষ। ১২ অক্টোবরছবি: রয়টার্স
মৃতের সংখ্যা এক দ্রুত বাড়ছে যে কবরস্থানগুলোতে আর কবর দেওয়ার জায়গা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার গাজার খান ইউনিস এলাকার একটি কবরস্থানে একটি নোটিশে লেখা ছিল, ‘এখানে কবর দেওয়া নিষেধ’। কারণ, সেখানে নতুন কবর দেওয়ার মতো আর জায়গা নেই। প্রায় একই চিত্র গাজার বেশির ভাগ কবরস্থানের। শুধু কবরস্থানে জায়গার সংকটই নয়, হামলার কারণে সেখানে পৌঁছানোও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খান ইউনিসে দাফনের কাজে হাত লাগানো স্বেচ্ছাসেবক আদেল হামাদা বলেন, নির্ধারিত স্থানে নিহতের দাফনের জন্য অপেক্ষার সুযোগ নেই। বাড়ির আশপাশেই খোলা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাফন করতে হচ্ছে।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে গাড়িতে করে হাজির হন এক ব্যক্তি। তাঁর কোলে ছোট্ট এক শিশুর মরদেহ। সেটিতে জড়ানো সাদা কাপড়ও রক্তে ভিজে লাল হয়ে উঠেছিল।
কবরস্থানের মতো হাসপাতালের মর্গগুলোতেও স্থান সংকট দেখা দিয়েছে। বোমা হামলার ধ্বংসস্তূপ থেকে মর্গে আসছে সারি সারি লাশ। বৃহস্পতিবার খান ইউনিসের একটি মর্গে দেখা যায় নিহতদের স্বজনদের ভিড়। এক পরিবারের নিহত আটজনের মরদেহ নিতে এসেছিলেন পরিচিতজনেরা। আগের দিন পরিবারটির বাড়িতে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০টি মরদেহ রয়েছে বলে জানান তাঁরা।