বিশ্বকাপের আমেজই আলাদা। তবে সময়ের পার্থক্যের কারণে অন্য দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপ অনেক সময় ঠিকমতো অনুসরণ করা কঠিন হয়ে যায় আমাদের দেশ থেকে। কিন্তু এবারের আয়োজনটা পাশের দেশে হচ্ছে বলে উত্তাপটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপটাও একটু ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে।
বিশ্বকাপের অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য দর্শক তো এই এশিয়ারই। তার ওপর স্বাগতিকেরা যখন ফেবারিট হিসেবে শুরু করে, সেটি অবশ্যই ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।
এমনিতে ১০ দলের ফরম্যাটটা ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ আমার। এ ফরম্যাটে সবাই সবার সঙ্গে খেলার সুযোগ পায়, নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেই জায়গা করে নেয় শেষ চারে। এটির আলাদা একটি মাহাত্ম্য আছে আমার কাছে। বিশ্বকাপে সবার লক্ষ্য তো ট্রফিকে ঘিরেই, কিন্তু প্রাথমিক লক্ষ্য অবশ্যই সেমিফাইনাল। ৪৫ দিনের লম্বা টুর্নামেন্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চাঙা থাকা। ক্লান্তি আর অবসাদ ভর করলেই সমস্যা। পিছিয়ে পড়বে দল। ফলে প্রতিটি দলের জন্যই ফিটনেস ব্যবস্থাপনাটা গুরুত্বপূর্ণ। চোট দলগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে।
আজকের ম্যাচে ইংল্যান্ডের শক্তির বড় জায়গা তাদের ব্যাটিং। ডেভিড ম্যালান ও জো রুট একদিক ধরে রেখে ইনিংস বড় করতে পারে। জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলাররা আবার অল্প সময় ক্রিজে থাকলেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিতে পারে। বেন স্টোকস না খেললেও ইংল্যান্ডের ব্যাকআপ যথেষ্ট শক্তিশালী। তাদের বোলিংটাও সমীহজাগানিয়া, বিশেষ করে পেস আক্রমণ।
বিশ্বকাপে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করলে মানসিক দিক দিয়ে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়। তবে এমন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড কেইন উইলিয়ামসন ও টিম সাউদিকে পাচ্ছে না। এটি অবশ্য টম ল্যাথাম, ড্যারিল মিচেলদের মতো তরুণদের একটা সুযোগ এগিয়ে আসার। ইংল্যান্ডকে হারানোর সামর্থ্য নিউজিল্যান্ডের ভালোভাবেই আছে।
দিবারাত্রির ক্রিকেটে কোনো একটা সেশনে পিচ একটা পক্ষকে ১০-১৫ শতাংশ সহায়তা করে, যেটি সব সময় খোলা চোখে ধরা পড়ে না। এ বিশ্বকাপে রান আসবে বলেই মনে হচ্ছে। আবার স্পিনাররাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে কিছু ভেন্যুতে।
ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল রশিদ ম্যাচ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে স্পিনে তাদের মূল ভরসা সে-ই। মঈন আলী বা লিয়াম লিভিংস্টোনরা পার্টটাইমার হিসেবেই কাজ করবে বলে মনে হয়। সেদিক থেকে নিউজিল্যান্ডের স্পিনে অনেক অপশন—মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধির সঙ্গে রাচিন রবীন্দ্রও আছে। সেদিক থেকে স্পিনে কিন্তু আজ নিউজিল্যান্ড এগিয়ে। ভারতের মাটিতে নিউজিল্যান্ড তিন স্পিনার নিয়ে খেলছে—এমন হলে সেটি কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপারই। সাউদি না থাকলেও নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণ দারুণ। তবে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতায় একটু ঘাটতি আছে ইংল্যান্ডের তুলনায়। দুই দলেরই অবশ্য ফিল্ডিং বেশ ভালো।
এমন লম্বা টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালের চারটি দল অনুমান করা কঠিন। এবার বৃষ্টির শঙ্কাও আছে। অঘটন তো ঘটবেই দু-একটা। এরপরও আমার মনে হচ্ছে, যাদের বেঞ্চ বেশি শক্তিশালী, তারা এগিয়ে থাকবে। ভারতের অনেক অপশন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে। সেমিফাইনালে যেতে তাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে নকআউটে গেলে দেশের মাটিতে খেলার চাপ বেড়ে যাবে অনেক গুণ।
এরপর আমি এগিয়ে রাখব ইংল্যান্ডকে। দলটিতে ভারসাম্য আছে, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। তারা সবকিছু বিশ্লেষণ করে খেলে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, ২০১১ বিশ্বকাপে নিজেদের সঙ্গে দুজন নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়ে এসেছিল তারা। মানে বলতে চাইছি, অনেক পেশাদার একটি দল। সবাই নিজেদের কাজটি করে ঠিকঠাক। আর ২০১৫ সালের ধাক্কা ২০১৯ সালে বেশ ভালোভাবে কাটিয়ে উঠেছে ইংল্যান্ড। এবার ২০১৫ সালের দুঃসহ স্মৃতিও তারা ভুলবে না, ২০১৯–এর আত্মতৃপ্তিতেও ভুগবে না।
তৃতীয় ও চতুর্থ দল হিসেবে কয়েকটি দল আসতে পারে। তবে উইলিয়ামসন ও সাউদি যেহেতু ফিরে আসবে, নিউজিল্যান্ডকে তখন সম্ভাব্য তৃতীয় দল হিসেবে বিবেচনা করছি আমি সেমিফাইনালে। ৪ নম্বরে লড়াইটা কঠিন হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা শক্ত হবে। সে পজিশনের সবচেয়ে কাছে দেখছি অস্ট্রেলিয়াকে। এরপর পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বাংলাদেশ আসবে এরও পরে।