ভোটার তালিকায় ভিনদেশিদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত দুর্নীতি বন্ধে কর্মকর্তাদের ওপর একগুচ্ছ ‘কড়া’ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মূলত কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধগুলো আরোপ করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব কর্মকর্তাদের সিএমএসে (কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) অ্যাকাউন্ট আছে সেসব কর্মকর্তাকে নিজ নিজ ইউজার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য আগেই চিঠির মাধ্যমে মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। সিএমএসে লগইন করার জন্য ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড ও ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) প্রয়োজন হয়।
নিজের সিএমএস অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার দায়িত্ব নিজের এবং কোনো অ্যাকাউন্ট হোল্ডার তার অ্যাকাউন্ট থেকে কৃত কার্যক্রমের জন্য দায়ী থাকবেন বিধায় নিজ অ্যাকাউন্ট কম্প্রোমাইজ থেকে সুরক্ষার জন্য নিম্নলিখিত ধাপ অনুসরণ করতে হবে-
১. নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। পাসওয়ার্ড লং দিতে হবে। পাসওয়ার্ড ক্যারেক্টার, ডিজিট, স্পেশাল ক্যারেক্টার, আপার কেইসের কম্বিনেশন করে দিতে হবে। কোনোভাবেই মোবাইল নম্বর, সন্তানের নাম, ১২৩৪৫৬৭৮, ৮৭৬৫৪৩২১, ১১২২৩৩৪৪, স্বামী/স্ত্রীর নাম ইত্যাদি পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
২. নিজের কম্পিউটারের ব্রাউজারে সিএমএসের পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখা যাবে না অর্থাৎ প্রতিবার লগইন করার সময় পাসওয়ার্ড যদি না চায় তাহলে বুঝতে হবে পাসওয়ার্ড ব্রাউজারে সেভ করা আছে। ব্রাউজারের History মাসে কমপক্ষে একবার ডিলিট করতে হবে।
৩. নিজের পাসওয়ার্ড টাইপ করার সময় নিজ দপ্তরের কোনো স্টাফ অথবা অন্য কোনো অফিসারের সামনে পাসওয়ার্ড টাইপ করা যাবে না।
৪. যে কম্পিউটার দিয়ে সিএমএসে লগইন করা হয়, সেই কম্পিউটারে কখনোই অন্য কোনো স্টাফ বা অফিসারকে কোনো প্রকার কাজ করতে দেওয়া যাবে না। কারণ এতে ওই কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ রিমোটলি সেই কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়ে নিতে পারেন অথবা পাসওয়ার্ড চুরি করার জন্য কোনো স্পাইওয়ার সফটওয়্যার ইন্সটল করে দিতে পারে।
৫. যে কম্পিউটারে সিএমএস ব্যবহার হয়, সেই কম্পিউটারে নিজ অজান্তে অন্য কোনো সফটওয়্যার চলছে কি না তা Task Manager এ গিয়ে নিয়মিত চেক করতে হবে। এমন কিছু নজরে এলে তা আইসিটি অনুবিভাগ, ক্ষেত্র বিশেষে এনআইডির কারিগরি অধিশাখাকে জানাতে হবে।
৬. ওটিপি নিজ নিজ মোবাইলে আসে সেহেতু নিজের মোবাইলে অবশ্যই পাসওয়ার্ড দিতে হবে। মোবাইলের পাসওয়ার্ড দপ্তরের কোনো অফিসার/স্টাফের সঙ্গে শেয়ার করলে ওটিপি চুরি করে সিএমএসে লগইন করতে পারে।
৭. নিজ মোবাইল রেখে ওয়াশরুমে, মিটিং, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রুমে যাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এক সেকেন্ড সময়ই যথেষ্ট মোবাইলে আসা ওটিপি চুরি করার জন্য।
৮. মোবাইলে পাসওয়ার্ড সেট করার সময় ‘Don’t Show notifications at all’ সিলেক্ট করতে হবে, যাতে মোবাইল লক থাকা অবস্থায় কোনো এসএমএস এলে কেউ পড়তে না পারে।
৯. সিএমএসের পাসওয়ার্ড মোবাইলে সেভ করে রাখা, ডায়রিতে লিখে রাখার মাধ্যমেও পাসওয়ার্ড চুরি হতে পারে।
১০. অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় user compromise হয় নিজ দপ্তরের কর্মকর্তা/স্টাফদের বিশ্বাস করার মাধ্যমে বিধায় নিজ দপ্তরের কর্মকর্তা/স্টাফদের থেকে পাসওয়ার্ড চুরি, ওটিপি চুরি, মোবাইলের লকের প্যাটার্ন জেনে যাওয়া ইত্যাদির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে এনআইডি মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর বলেন, কারো পাসওয়ার্ড চুরি হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেই দায় নিতে হবে।
ইসির এনআইডি সার্ভারে বর্তমানে ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন নাগরিকের তথ্য রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের সার্ভারও। এ সার্ভারেই নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি করে দেওয়া হয় এনআইডি। আবার এখানকার সংরক্ষিত তথ্যই সংশোধন করা হয় নাগরিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। তবে অনেকেই এ কাজে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেন।