ক্ষমতায় আসতে চাইলে বিএনপিকে নির্বাচনের যাত্রা শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আসলে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। তাই ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য, বিক্ষোভ, আন্দোলন ও পদযাত্রা করছে। এসব পদযাত্রা, মরণযাত্রা না করে নির্বাচনের যাত্রাশুরুকরেন।’বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থাকবেন না। কিন্তু ক্ষমতায় আসতে চাইলে অবশ্যই নির্বাচন করেই আসতে হবে। যদি মানুষ ভোট দেয়, নির্বাচনে যদি জিততে পারেন, তাহলে আমরা বিদায় নিয়ে চলে যাব। বৃহস্পতিবার দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের লাইন-১-এর নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আজ বেলা ১১টার দিকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের রাজউক কমার্শিয়াল প্লট মাঠে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা যে উন্নয়নকাজগুলো করেছেন, এগুলোর উদ্বোধন মাত্র শুরু হয়েছে। আর এই উদ্বোধনের জ্বালায় বিএনপি জ্বলছে। বিএনপির এখন অন্তর্জ্বালা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ১০০টি সেতু—এসব উন্নয়নে বিএনপির শুধু জ্বলছে। শেখ হাসিনার এসব অর্জন আর উন্নয়ন যারা সইতে পারছে না, তারাই অন্তর্জ্বালায় ভুগছে। অন্যদিকে রূপপুর, মাতারবাড়ী, পায়রা, রামপাল, সমুদ্রসীমা ও সীমান্তজয়—সবই শেখ হাসিনার অর্জন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কোনো কিছুতেই শেখ হাসিনার উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে থাকবে জানিয়ে সভায় উপস্থিত জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না। বিএনপি প্রথমে বিক্ষোভ দিয়ে শুরু করেছিল। আর এখন করছে নীরব পদযাত্রা। পথ হারিয়ে বিএনপি এখন নীরবে পদযাত্রা করছে। তাদের মরণযাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’ বিএনপির আন্দোলন, ১০ তারিখের লাল কার্ড, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত, তারেক রহমানের ফিরে আসা, খালেদা জিয়ার সিংহাসনে বসা, তাদের ৫৪ দল, ২৭ দফা, ১৪ দফা—এই সবকিছু ভুয়া বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ শুধু পরবর্তী নির্বাচনের কথা ভাবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ভাবেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। শেখ হাসিনা থাকলে এই দেশ কখনো পথ হারাবে না।’ আগামী জানুয়ারিতে বিএনপির ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, আগুন-সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ার করেন। সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখানে এত লোকের সমাগম হয়েছে যে সুধী সমাবেশ জনসমাবেশে রূপ নিয়েছে। তাই আমিও জনসভার স্টাইলে বক্তব্য দিলাম। স্মার্ট বাংলাদেশে আমাদের স্মার্ট কর্মী দরকার। নেতা আমাদের একজনই। তিনি শেখ হাসিনা। আর আমরা সবাই তাঁর কর্মী বাহিনী।’ ‘আমরা সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলব তো?’ প্রশ্ন করে তিনি উপস্থিত লোকজনের সমর্থন চান। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজে নানা প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জাপান সরকার বাংলাদেশের পাশে থেকেছে এখনো আছে। এ কারণে জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে মেট্রোরেলের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্প আর একটিও নেই। মেট্রোরেলের পেছনে ব্যয় হচ্ছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান সরকার দিচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। জাপান সরকারকে ধন্যবাদ। তারা আমাদের দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।’ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৬ লেনের সড়কের কাজও জাপান করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি। উড়াল মেট্রোর যুগ থেকে বাংলাদেশ পাতাল মেট্রোর যুগে প্রবেশ করল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১ মূলত পাতাল রেলপথ হবে। দুই ভাগের ৩১ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ২১ কিলোমিটার হবে পাতালপথ। আর বাকি ১০ কিলোমিটার হবে উড়ালপথ। মেট্রোরেলের মতো উন্নয়নকাজের মধ্য দিয়ে ২০৩১ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ আধুনিক গণপরিবহন দ্বারা সজ্জিত হতে যাচ্ছে।’ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে গিয়ে পৌঁছাবে বলেও জানান তিনি।