বাংলাদেশে ২০২০ সালে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হ্রাস পেয়েছে এবং একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত তদন্ত ও গ্রেফতার বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম (সিআরটি) ২০২০ অনুযায়ী এ তথ্য জানা দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদ এবং এর ভূখন্ডকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।
এতে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকারের নতুন জাতীয় সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিট একটি প্রধান সন্ত্রাস দমন সংস্থা হিসাবে ভূমিকা পালনের জন্য স্ট্যান্ডিং আপ অপারেশন শুরু করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে তিনটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেও কোন প্রাণহানি হয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ তাদের সীমান্ত ও বন্দরগুলোতে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে ইন্টারপোলের সঙ্গে আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করেছে। কিন্তু তাদের কাছে কোন ডেডিকেটেড সন্ত্রাসী সতর্কতা তালিকা নেই।
তবে সিআরটি বলেছে, জ্ঞাত বা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ের একটি সতর্কতা তালিকা তৈরির জন্য বাংলাদেশের সক্ষমতা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহল ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত রয়েছে। ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারির জন্য মার্কিন-প্রশিক্ষিত বিস্ফোরক শনাক্তকরণ কে-নাইন টিম প্রস্তুত থাকলেও তাদের স্থায়ী উপস্থিতি নেই।
ইউএনএসসিআর ২৩৯৬ এর অধীনে আগস্টে প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসীদের ভ্রমণ সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের জন্য বিধিমালা বাস্তবায়ন জোরদার করতে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সন্ত্রাস প্রতিরোধ শাখা কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় পর্যায়ের কর্মশালায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গ্রেফতার ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার চলমান ধীরগতি, বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময় কাজ করার সীমাবদ্ধতার কারণে এক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের মামলার জট বিরাজ করছে এবং দোষী সাব্যস্ত করার হার ১৫ শতাংশেরও কম।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী সংস্থাগুলো সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলায় গ্লোবাল কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ফান্ডের অধীনে কান্ট্রি সাপোর্ট মেকানিজমের মাধ্যমে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জঙ্গিবাদ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ক জাতীয় কমিটি সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ইমাম ও আলেমদের সঙ্গে কাজ করছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ২০২০ সাল জুড়ে কমিউনিটি পুলিশিং প্রচেষ্টা পরিচালনা এবং সন্দেহভাজন বিদেশী সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বিষয়ে তদন্ত ও গ্রেফতারের পাশাপাশি ‘উগ্রপন্থীদের নিস্ক্রিয়করণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করেছে।
পুলিশ ধর্মগ্রন্থ-ভিত্তিক বার্তার মাধ্যমে সন্ত্রাসমূলক অপপ্রচার মোকাবেলায় ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করেছে এবং কোরান কোন ধরণের সন্ত্রাস ও সহিংসতা সমর্থন করে না এই বার্তা আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ইমামদের নিয়োজিত করেছে।
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন বলেন, প্রতি বছর সিআরটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আলোকপাত করে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নীতি, কর্মসূচি ও সম্পদ বরাদ্দ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। কারণ ‘আমরা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা গড়ে তুলতে চাই।