পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল-হামাসের লড়াইয়ের আবহেই নতুন মোড় নিলো আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ সুদানের গৃহযুদ্ধ। ছয় মাসের রক্তাক্ত লড়াইয়ের পরে ওই দেশের সেনাবাহিনীকে হটিয়ে আধা সামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’ (আরএসএফ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ দারফুরের দখল নিতে চলেছে বলে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার দাবি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং লিবিয়ার পাশাপাশি আরএসএফ-কে রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাবাহিনী ওয়াগনারও সহায়তা করেছে বলে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের দাবি। অন্য দিকে, সুদান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে মিসর ও ইউক্রেন। দারফুরের লড়াইয়ে সুদান সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ায় পশ্চিমাঞ্চলের ওই প্রদেশ থেকে লক্ষাধিক বেসামরিক নাগরিক পালাতে শুরু করেছে বলে প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়েছে। রাজধানী খারতুমে এখনো দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলছে।
সুদানের বর্তমান গৃহযুদ্ধে প্রতিপক্ষ ওই দেশের সশস্ত্র বাহিনীরই দুই জেনারেল- সেনাপ্রধান আবদেল আল ফাতাহ আল বুরহান ও জেনারেল মোহম্মদ হামদান দাগালো। প্রথমজন সুদানের সেনাপ্রধান এবং ২০১৯ থেকে দেশের সর্বোচ্চ শাসনব্যবস্থার জন্য ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলের প্রধান। দ্বিতীয়জন দেশের আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ-এর প্রধান তথা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। দু’জন জেনারেলের বিরুদ্ধেই মানবাধিকার ভঙ্গ, লুটতরাজ, নৃশংসতা ও ধর্ষণে মদতের অভিযোগ রয়েছে।
গত কয়েক দশকে সুদানে সামরিক বাহিনীর গৃহযুদ্ধের গণহত্যায় এই দুই জেনারেলের ‘বড়’ ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সামরিক শাসক ওমর আল বশির ৩০ বছর ক্ষমতাসীন থেকে শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের জেরে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। তার পর প্রভাবশালী সামরিক গোষ্ঠীর নেতারা, এবং বেসামরিক নেতারা মিলে একটি পরিচালন পরিষদ (কাউন্সিল) গঠন করে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থা করেন। ঠিক হয়েছিল, কয়েক বছরের মধ্যেই পুরোপুরি অসামরিক এক সরকারের হাতে দেশের ক্ষমতা তুলে দেবে।
কিন্তু ২০২১-এর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদকের নেতৃত্বাধীন সেই অন্তর্বর্তী সরকারকেও উৎখাত করেন সেনাপ্রধান বুরহান। এর পর তিনি ২০২৩ সালে নির্বাচন ঘোষণা করেন। অর্থাৎ, এ বছরই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে জেনারেল বুরহান সুদানের সেনাবাহিনী এবং আরএসএফ-কে এক ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী হতেই দাগালোর সাথে তার বিবাদ শুরু হয়েছিল। এপ্রিল মাসের মধ্যপর্বে যা গড়ায় রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধে।