বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অষ্টম আসরে আবারো এককভাবে শীর্ষে ফিরলো সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল।
আজ থেকে শুরু হওয়া সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে বরিশাল ৩২ রানে হারিয়েছে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। ব্যাট-বল হাতে আরও একবার অলরাউন্ডার নৈপুন্যে প্রদর্শন করেছেন সাকিব। ব্যাট হাতে ৫০ ও বল হাতে ২০ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরাও হন তিনি।
টুর্নামেন্টের ২১তম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৫ রান করে বরিশাল। জবাবে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৩ রান তুলে কুমিল্লা।
এই জয়ে ৮ খেলায় ৫ জয়, ২ হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে বরিশাল। এতে নক-আউট পর্বের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে বরিশাল। অপরদিকে, ৭ ম্যাচে ৪ জয়, ২ হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে কুমিল্লা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
ব্যাট হাতে নেমে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন বরিশালের দুই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। ১৯ বলে ৩২ রান তোলার পরই ছন্দ পতন। চতুর্থ ওভারে কুমিল্লার স্পিনার তানভীর ইসলামের বলে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সুমন খানকে ক্যাচ দিয়ে ৮ বলে ১০ রান করা গেইল আউট হলে প্রথম উইকেট হারায় বরিশাল।
তিন নম্বরে সুবিধা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। তানভীরের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ১ রানে থামেন তিনি।
এরপর শাহরিয়ারের সাথে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। পঞ্চম ওভারে সুমন খানের বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কা আদায় করে নেন শাহরিয়ার। তবে অষ্টম ওভারের শেষ বলে ইংল্যান্ড স্পিনার মঈন আলির শিকার হয়ে বিদায় নেয়া আগে ২৫ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন শাহরিয়ার। সাকিবের সাথে ২১ রানের জুটি গড়েন তিনি।
তবে দলকে লড়াই করার মত স্কোরের ভিত গড়ে দেন সাকিব ও তৌহিদ হৃদয়। চতুর্থ উইকেটে ৫৫ বলে ৬৭ রানের জুটি গড়েন তারা। শুরুতে সাবধান থাকলেও সাকিব-হৃদয় বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন । মুস্তাফিজুর রহমানের করা ১৭তম ওভারে জীবন পান হৃদয়। ঐ ওভারে পরপর দু’টি চার মেরে ১ রান নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন সাকিব।
৩৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরির পাবার পরের ডেলিভারিতেই আউট হন সাকিব। আফগানিস্তানের পেসার করিম জানাতের বলে লং-অনে মোমিনুলকে ক্যাচ দিলে ৩৭ বলে শেষ হয় সাকিবের ৫০ রানের ইনিংসটি। ৪টি চার ও ২টি ছক্কা দিয়ে নিজির ইনিংসটি সাজান বরিশালের অধিনায়ক।
এরপর হৃদয়-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান দলকে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৫ রান এনে দেন। ব্রাভো ৬ বলে ১০ রান করেন। ২টি চারে ৩৭ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। ৩ রানে অপরাজিত থাকেন নুরুল। কুমিল্লার তানভীর ২২ রানে ২ উইকেট নেন। এছাড়া মুস্তাফিজ-মঈন-জানাত ১টি করে উইকেট নেন।
১৫৬ রানের জবাবে শুরুটা ভালো হয়নি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। দ্বিতীয় ওভারেই কুমিল্লার অধিনায়ক ১ রান করা ইমরুলকে আউট করেন বরিশালের সাকিব।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে আরেক ওপেনার লিটনকেও শিকার করে শুরুতেই কুমিল্লাকে চাপে ফেলে দেন সাকিব। চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৫৩ রান করা লিটন এবার ১৭ বলে ৪টি চারে ১৯ রানে সাজঘরে ফেরেন।
২৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর চাপ সামলে উঠার আগেই মিডল-অর্ডার ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয়কে হারায় কুমিল্লা। ব্রাভোর শিকার হওয়ার আগে ৫ রান করেন জয়।
জয়ের বিদায়ে উইকেটে এসেছিলেন ইংল্যান্ডের মঈন। উইকেটে সেট হতে সময় নিয়েছেন তিনি। তবে দশম ওভারে অফ-স্পিনার শান্তর বলে এক্সট্রা কভারে ব্রাভোকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মঈন। ১১ বলে ৬ রান করেন তিনি।
দলীয় ৫৮ রানে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে আউট হন মঈন। এরপর ৭০ রানে পৌঁছাতে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে কুমিল্লা। নাহিদুল ১ রানে রান আউট ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন ৩ রান করে নাইম হাসানের শিকার হন। এক প্রান্ত আগলে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুললেও, ৩০ রানের বেশি করতে পারেননি মোমিনুল। নাইমের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ৩টি চার মারেন মোমিনুল।
৭০ রানে সপ্তম উইকেট পতনের পর শেষদিকে জানাতের ১৩ বলে ১৭ ও তানভীরের ১৪ বলে অপরাজিত ২১ রান কুমিল্লাকে বড় হারের মুখ থেকে রক্ষা করে। শেষ পর্য়ন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৩ রান করে কুমিল্লা।
বরিশালের নাইম ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন। সাকিব-ব্রাভোর শিকার ২টি করে উইকেট।