বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বন্ধুপ্রতীম দেশ দুটি তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো জোরদার করার অঙ্গীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মোরিসন সোমবার বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ দুটির সম্পর্ক আরও উন্নয়নের প্রত্যাশা রেখে পৃথক শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন।
বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় হাই কমিশন সোমবার রাতে হোটেল পূর্বানীতে এ উপলক্ষে এক সংবর্ধনার আয়োজন করে। এখানেই ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক মিশনের কাজ শুরু হয়েছিল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলীয় হাই কমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদারে নিজ নিজ সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। তারা দেশ দুটির কোভিড-১৯ থেকে উত্তরণে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন এবং জলবায়ু চ্যালেঞ্জ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থবহ অংশীদারিত্বের কথা পুর্নর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় আলম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থনের কথা স্মরণ করেন। তিনি ডাচ-অস্ট্রেলিয়ান মি. উইলিয়াম এ এস ওউডারল্যান্ডের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ জানান, যিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে নির্ভিকতার সাথে লড়াই করেন। তিনি একমাত্র বিদেশী নাগরিক হিসেবে বীর প্রতীক লাভের গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও প্রতিমন্ত্রী ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ড. জেফরি ডেভিস, হার্বার্ট ফেইথ ও অন্টনি ক্লিফটনের মতো অস্ট্রেলীয়দের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
শাহরিয়ার আলম উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও তিনি ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গফ হুইটলামের বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন। তার ওই সফরকালে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুইটলাম শান্তি, বহুত্ববাদ এবং মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অভিন্ন অঙ্গীকারের ওপর ভিত্তি করে দু’দেশের জনগণের মধ্যে একটি স্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সহায়তা ও পরবর্তী কয়েক দশক ধরে অব্যহতভাবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তার জন্যও তিনি অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানান। আলম আরো বলেন, দু’দেশের জনগণের কল্যাণ এবং অর্থনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে একটি প্রধান অংশীদার হিসেবে পেতে আগ্রহী।
অস্ট্রেলীয় হাই কমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেন, অস্ট্রেলিয়াও কোভিড-১৯ মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিস্তারে বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী। তিনি আরো বলেন, ৫০ বছর আগের এই দিনে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রৃৃৃৃৃৃী নাইজেল বোয়েন ঘোষণা করেছিলেন যে ‘অস্ট্রেলিয়া নতুন দেশ বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, “আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী অন্যতম প্রথম দেশ অস্ট্রেলিয়া।”
হাই কমিশনার ব্রুয়ার ও প্রতিমন্ত্রী আলম হোটেল পূর্বানীতে ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক মিশনের উদ্বোধনী স্থান শনাক্তকারী একটি ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় ব্রুয়ার আলমকে ১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে অস্ট্রেলীয় কেবিনেট স¥ারকের একটি বাঁধাই কপি উপহার দেন। এতে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার অস্ট্রেলীয় সরকারের সিদ্ধান্ত নথিবদ্ধ করা আছে। এছাড়াও তিনি ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি আলমকে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের ফরেন অ্যাফেয়ার্স প্রেস রিলিজের একটি কপিও উপহার দেন।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এর আগে, এই দিনে অস্ট্রেলীয় হাই কমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।