মাদকাসক্ত চিহ্নিত করতে শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে চাকরিতে প্রবেশ পর্যন্ত সকল পর্যায়ে ডোপ টেস্ট কার্যক্রম চালুর তাগিদ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু। সোমবার দুপুরে জাতীয় সংসদে নিজ অফিসে জিএমটি নিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে বলেন।
সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন চায় সংসদীয় কমিটি। মাদকাসক্ত চিহ্নিত করতে সকল পর্যায়ে ডোপ টেস্ট চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ডোপ টেস্টের আওতায় আসবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র কিংবা যারা ইউনিভার্সিটি-কলেজে অ্যাডমিশন নেবেন তাদেরও ডোপ টেস্ট করা হবে। এছাড়া শিক্ষকরাও এই ডোপ টেস্টের আওতায় আসবেন। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বছরে একবার ডোপ টেস্ট হবে। পজিটিভ হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরকার ডোপ টেস্টের ওপর জোর দিয়েছে। এই ডোপ টেস্টকে সর্বস্তরে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। পুলিশের ডোপ টেস্ট শুরু হয়েছে। গাড়ি চালকদের ডোপ টেস্ট শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে। এতে মাদকের চাহিদা কমবে। ফলে দেশে মাদকের প্রবেশও কমবে।
দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত। প্রতিবছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা এখন মেয়েরাও অবলীলায় গ্রহণ করছে। বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে দুইশ মা-বাবা খুন হয়েছেন। দেশে মাদকাসক্তদের তিনভাগের দুই ভাগই তরুণ।
শামসুল হক টুকু বলেন, গণপরিবহনের চালকদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, প্রায় সময় বাসে ঘটে যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের মতো ঘটনাও। তবে ওইসব অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চালকদের ডোপ টেস্ট করার কথাও বলা হয়েছে। মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরকার ডোপ টেস্টের ওপর জোর দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শুধু ভর্তি পরীক্ষাই নয়, বরং একটি মেডিকেল টেস্টও হওয়া উচিত যাতে দেখা হবে কোনো পরীক্ষার্থী মাদকাসক্ত কিনা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও মনে করে মাদকের বিস্তার ঠেকাতে একটি ইতিবাচক ফল দেবে।
অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষার সাথে থাকবে ডোপ টেস্টের বিধান। তিনি বলেন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সময়েই এটা করা সম্ভব এবং এটির ব্যবস্থাপনাও খুব কঠিন কিছু হবে না।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, তিনি প্রথমে এই টেস্ট প্রয়োগ করেছেন ২০১০ সালের ১৮ই এপ্রিল পাবনায় তার নির্বাচনী এলাকায় ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে।
“সম্মেলনের নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের হাসপাতালে নিয়ে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করেছিলাম। কারণ নেতা যারা হবে তাদের সৎ ও সুস্থ হতে হবে। সেবার এই টেস্টে এক তৃতীয়াংশ পজিটিভ ধরা পড়েছিলো।”
তবে এর প্রভাব ব্যাপক হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এবার কদিন আগে যুবলীগের সম্মেলনেও একই টেস্টের ব্যবস্থা হয়েছে কিন্তু একজনও পজিটিভ পাইনি।”
টুকু বলেছেন, মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। মাদকের আগ্রাসন রুখতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।