অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
বাংলাদেশ সর্বশেষ

সংস্কার ইস্যুতে ইউনূস সরকারের ‘ব্রিলিয়ান্ট স্ট্র্যাটেজি’

সংস্কার ইস্যুতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহলে দারুণভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও মতামত জনগণের সামনে প্রকাশ করার এই সিদ্ধান্তকে ‘ব্রিলিয়ান্ট স্ট্র্যাটেজি’ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের এই কৌশল কোনো রাজনৈতিক দল যদি সংস্কার বিমুখ থাকে তাদের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি সরকারের উদ্যোগ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান আরও স্বচ্ছ করবে। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো পক্ষের ভেতরে যদি দ্বিমুখিতা থাকে বা রাজনৈতিক অসততা থাকে, সেটিও জনগণ মূল্যায়ন করার সুযোগ পাবে বলে মনে করেন অনেকে। একজন বিশ্লেষক সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সংস্কার ইস্যুতে ড. ইউনূস সরকারের ‘ব্রিলিয়ান্ট স্ট্র্যাটেজি’ এবং ‘চিকন বুদ্ধি’ বলেও মন্তব্য করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, সংস্কার প্রস্তাব এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও মতামত যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে সংস্কার উদ্যোগ তত বেশি সফল হবে। এক্ষেত্রে তারা সংস্কার প্রস্তাব ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশে সীমাবদ্ধ না রেখে সংবাদপত্র, অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা, এমনকি লিফলেটের মাধ্যমেও জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার পরামর্শ দেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে বিবাদে জড়িয়েছে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো। আগে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষ করে নির্বাচন নাকি কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন এ নিয়ে তাদের বিরোধ এখন প্রকাশ্যে। একে-অপরকে উদ্দেশ্য করে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিচ্ছেন অনেক নেতা।

এদিকে সংস্কার বাস্তবায়ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দল এবং গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির গুলোকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কারের পক্ষে ঐক্যমত সৃষ্টির জন্য গঠন করা হয় জাতীয় ঐক্যমত কমিশন। এ কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই।

গত শনিবার (ফেব্রুয়ারি ১৫) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানান, এই সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যে অবস্থান, তারা যে মতামত দেবে তা তালিকা আকারে সর্বসাধারণের সামনে প্রকাশ করা হবে।

সংস্কার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধ্যাপক ইউনূসের সেই বক্তব্য শেয়ার করে প্রশংসা করছেন।

হোসাইন তারেক নামে একজন অধ্যাপক ইউনূসের সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, এক ছক্কায় গ্যালারি পার। এবার লও ঠ্যালা। কারা জনগণের রাজনীতি করে আর কারা পকেটের (রাজনীতি) করে জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

রাসেল ফিরোজ নামে আরেকজন ফেসবুকে লিখেছেন, লও ঠ্যালা। জনগণ সব জেনে গেল এবার, কারা সংস্কার চায়, কারা চায় না।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ইমাম হাসান নামে একজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সত্যিকারের ভালো সংস্কার চাই। একই সঙ্গে আমরা দেখতে চাই কারা সংস্কার চায়, আর কারা সংস্কার চায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র মূল্যায়ন করতে চাই।

সংস্কার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের এই স্ট্র্যাটেজি কতটা ব্রিলিয়ান্ট হয়েছে তার মূল্যায়ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কৌশলগতভাবে এটা ঠিকই আছে, সঠিক উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। এর চেয়ে বেস্ট (সবচেয়ে ভালো) কোনো কৌশল আমার মাথায় নেই। এটাই সর্বোচ্চ আমার কাছে মনে হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির এই শিক্ষক বলেন, অতিত একটা অভিজ্ঞতা, আগে সংস্কারের যত চেষ্টা নেওয়া হয়েছিল সেগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করেনি। আমার মনে হয় সেটাকে মনে রেখে উনি (অধ্যাপক ইউনূস) এটা করেছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছতার সঙ্গে সংস্কারমুখী হতে অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগ ভূমিকা রাখবেও বলেও মনে করেন সাব্বির আহমেদ।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো চরিত্র বিশ্লেষণের জন্য এটা খুব দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহি করার জন্য, তারা কী কথা দিয়েছিল, কী কথা রাখছে, এই মূল্যায়নটা জনগণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে যতবেশি সংখ্যক মানুষের কাছে (সংস্কার প্রস্তাব এবং রাজনৈতিক দলগুলো অবস্থান) পৌঁছানো যাবে, সংস্কার উদ্যোগ তত বেশি কার্যকর হবে।

সংস্কার প্রস্তাব ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও মতামত মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সাব্বির আহমেদ বলেন, আমি মনে করি এটা শুধু ওয়েবসাইটে কেন, ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের কত শতাংশ লোক দেখবে, এটা আরও একটু বিস্তৃত করা দরকার। সংবাদপত্রে দেওয়া দরকার, এতে এটি আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাবে। শুধু তাই নয়, আমি মনে করি এটাকে সরকার যদি লিফলেট আকারেও সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়, এটাও করা উচিত।

কী বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা

গত শনিবার (ফেব্রুয়ারি ১৫) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার থেকে সরে যাওয়ার কোনো উপায় আমাদের নেই, জাতি হিসেবে। যদি বলি যে সংস্কারের প্রয়োজন নেই, লোকে হাসবে। এতদিন কী বললেন তাহলে। বললেন যে এগুলো, এটা ভুল, এটা ভুল। এখন বলে যে সংস্কারের কাজ নেই। সেটা আমরা কেউ বলছি না, সংস্কার দরকার নেই এবং খুব গভীরভাবে দরকার, হালকাভাবে নয়।

তিনি বলেন, অনাচারের সীমা নাই, এটা আমরা সবাই স্বীকার করছি। কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো চলছে না। কোনো আইন ঠিকমতো চলছে না। সংস্কার তো এটা নিয়েই কথা …কাজেই সংস্কার থেকে আমাদের কোনো বাঁচোয়া নেই এবং সেটা গভীরভাবে হতে হবে। এটা করতে হবে, এটা থেকে আমাদের মুক্তি নেই। দেশকে বাঁচাতে হলে এটা আমাদের করতে হবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে তো কথা হচ্ছে বহুকাল থেকে। এই কথাটা ওনারা (সংস্কার কমিশন) কাগজে লিখে দিয়েছেন। যাতে সুন্দরভাবে এগোতে পারি।

রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও মতামত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এক সঙ্গে অথবা আলাদাভাবে বলবে তারা এটাতে একমত, এটাতে একমত নই, এটাতে সংশোধন দিলাম,  ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা যেটা করবো এখানে বসে, আপনারা কোন দল কোনটাতে ইয়েস বলেছেন, আমরা রাজি, কোন দল নো বলেছেন, আমরা রাজি না। কোন দল বলছে আমরা সংশোধন দিলাম, আমরা সবই ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবো। যেকোনো মানুষ দেখতে পাবে, কোন বিষয়ের প্রতি তার সম্মতি আছে, কোন বিষয়ের প্রতি সম্মতি নাই।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটা কোন গোপন জিনিস না। এটা হলো রাজনৈতিক দলের একটা বক্তব্য। আপনি বলেন, আপনি কোনটাতে সম্মতি নাই, লিখে দেন আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেব। যে এই দল বলেছে তারা কোনটার প্রতি রাজি না। অথবা আমরা সব কয়টিতে একমত। আমরা একমত হতে পারি, সংশোধন সাপেক্ষে একমত হতে পারি অথবা এটাতে আমরা রাজি না। এটা আমরা ধরতে চাই না। হতে পারে। আমাদের দায়িত্ব হলো আপনাদের ইচ্ছেটার প্রতিফলন করা। জাতির সামনে আপনাদের ইচ্ছেটা তুলে ধরা।

তিনি বলেন, ধরুন ১০০ প্রস্তাব আছে নির্বাচন প্রণালী নিয়ে, কোনো একটা দল বলল আমরা ৯৮টাতে রাজি, এই দুইটাতে রাজি না। সুন্দর কথা হয়ে গেল। কথার কথা বলছি, আরেকটা দল আমরা দুইটাতে রাজি বাকিগুলোতে রাজি না। বলে কি, নির্বাচনে সংস্কার হবে, ১০০ প্রস্তাব আছে, মাত্র ২টাতে। এইটায় কেন ওনারা রাজি হলেন না। এটা কেন ওনারা রাজি হলেন না। মানুষ যাতে এটা বোঝে, দেখতে পায়। আমরা রেসপন্সিবল হই। যে আমাদের কাছে পরিষ্কার। এই তালিকাটা তৈরি করা।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আপনি লিস্ট নিয়ে দলের সবাইকে নিয়ে বসবেন, যে এটাতে আমরা একমত, এটা একমত নই, এটা সংশোধন লাগবে, এটাতে মোটেও একমত নই। এই তালিকাটা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিলেই হবে। আমরা যথারীতি এটা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিবো। আপনার সই করা জিনিস আছে ওখানে। আলটিমেট লক্ষ্য হলো একটা চার্টার তৈরি করা। আমরা আপনাদের বলবো, এটা আপনাদেরই মতামত, মেহেরবানি করে সই করে দেন। এটা আমরা জাদুঘরে সংরক্ষণ করবো। যাতে মানুষ জানতে পারে আমরা কি করছি, না করছি।

সম্পর্কিত খবর

জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা-২০২৪ এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

gmtnews

প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহে যাচ্ছেন আজ, উদ্বোধন করবেন ৭৩ প্রকল্প

gmtnews

৫ গুণ বেশি দামে ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিট বিক্রি, আটক এক

Shopnamoy Pronoy

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত