বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৪৩ কোটি ৮৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। আর সৌদি আরব থেকে এসেছিল ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।
সৌদি আরব এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানো দেশ। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মাঝামাঝি চিত্র উল্টে যায়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রবাসী আয় সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে যায়।
তবে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কম হলেও তবে বছর শেষে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৫২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। আর সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। আগের বছরের চেয়ে দুই দেশের প্রবাসী আয় বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসার বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আশঙ্কা করছে, যেসব টাকা পাচার হয়েছিল, সে টাকাই প্রণোদনা নেওয়ার জন্য প্রবাসী আয়ের ফর্মে ফিরে আসছে। যে হারে মানুষ প্রবাসে গেলে উল্লেখযোগ্য হারে রেমিট্যান্স বাড়ে, সে হারে মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে গেছে, এমন তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতেও (বিএমইটি) নেই।
টাকার অবমূল্যায়নের ফলে ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়ার জন্যও পাচার হওয়া টাকা ফিরে আসতে পারে বলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আসার যৌক্তিকতা দেখে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
প্রবাসী আয়ের অবয়বে পাচার হওয়ার টাকা ফেরত আসার বিষয়টি অনুসন্ধান সাপেক্ষ বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সৌদি আরবে যে হারে মানুষ যাচ্ছে সে অনুযায়ী রেমিট্যান্স আসছে না। আর না আসার কারণ হলো হুন্ডি বা ব্যাংক বহির্ভূত লেনদেন।
তিনি আরও বলেন, হুন্ডি কারবারি ডলারের বাজারকে অস্থির করছে। দেশে দুর্নীতি হলে ডলারের চাহিদা থাকে। যে দামেই হোক ডলার কেনা হয়। কারণ, অবৈধ টাকা বা দুর্নীতি করে অর্জিত টাকা দিয়ে যে দামেই হোক ডলার কিনবে। এতে তাদের লোকসান নেই। এর ফলে স্থানীয় ডলারের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। আর এর প্রভাব গিয়ে পড়ে প্রবাসীয় আয়ে। যে কারণে আমাদের প্রবাসী আয় হুন্ডির মাধ্যমে আসছে না।
সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। শ্রম বাজার হিসেবেও পত্তন প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল আগে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ১৯৭৬ সালে ২১৭ জন মানুষ দেশটিতে যাওয়ার পর সর্বশেষ গত ২০২৩ সালেই এক লাখ ২২ হাজার ৫৭২ জন মানুষ কাজের সন্ধানে যায়। আর এ যাবত দেশটিতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৫৪ লাখ ৩ হাজার ৫৩২ জন। মাঝে প্রায় পাঁচ দশকের প্রতি বছরে জ্যামিতিক হারে সৌদি আরবে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নিরূপণে সরকারের দপ্তর এখনও ভিন্ন করে খাতাই খোলেনি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে ৩ লাখ ২৩ হাজার ১০ মানুষ গেছে। সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ যাওয়া সৌদি আরবের পাশাপাশি ওমানে গেছেন ৪৬ হাজার ৩৬৭ জন; মালয়েশিয়ায় ৮২ হাজার ৮৯৩ জন; সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫ হাজার ২৯৫ জন; সিঙ্গাপুরে ১২ হাজার ৩০৩ জন, কুয়েতে ৭ হাজার ৭৫৩ জন; কাতারে ৬ হাজার ৫১০ জন। এর বাইরে প্রায় শতাধিক দেশে বাংলাদেশের মানুষ কর্মরত রয়েছে।
যেসব দেশে বেশি বাংলাদেশি কর্মরত, প্রবাসী আয়ও বেশি পাঠাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও ঠিক যে প্রশিক্ষিত মানুষ যেসব দেশে বেশি হারে কর্মরত, সেখানকার প্রবাসীরা বেশি হারে আয় করবেন। যদি তারা দেশে পাঠান বেশি অর্থও পাঠাতে পারবেন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে উঠছে এসেছে দক্ষ ও উচ্চশিক্ষিত জনশক্তি আয় বেশি করলেও তারা বেশি অর্থ দেশে পাঠান না। এ বিবেচনায় সৌদি আর থেকে পাঠানো প্রবাসী আয় বেশি হবে।