লজ্জার হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সপ্তম আসর শুরু করলো বাংলাদেশ। রবিবার বাছাই পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হারলো মাহমুদুল্লাহ-সাকিবরা।
প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪০ রান করে স্কটল্যান্ড। জবাবে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৪ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
ওমানের আল আমেরাতে ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ওভারে বল হাতে ৪ রান দেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারে লেগ-বাই থেকে ১ রান ছাড়া মেডেন ওভার পান বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
প্রথম দুই ওভারে রান না আসায় চাপে পড়ে স্কটল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে সেই চাপ আরও বাড়ান পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে রানের খাতা খোলার আগেই কাইল কোয়েৎজারকে বোল্ড করেন সাইফুদ্দিন।
এরপরই চাপের মুখ থেকে দলকে রক্ষা করতে মারমুখী হয়ে উঠেন আরেক ওপেনার জর্জ মুনসে। পাওয়ার প্লেতে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন তিনি। তার দেখাদেখি ১টি চার মারেন তিন নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক ম্যাথু ক্রস। এতে ৭ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৪৪ রান তুলে ম্যাচে ফিরে স্কটল্যান্ড। এরপরই জমে যাওয়া মুনসে-ক্রস জুটি ভাঙ্গতে মরিয়া ছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের আশা পূরণ করেন অফ-স্পিনার মাহেদি হাসান। নিজের প্রথম ও ইনিংসের অষ্টম ওভারে ২ উইকেট তুলে নেন মাহেদি। দলীয় ৪৫ ও ৪৬ রানে মুনসে-ক্রসকেই বিদায় দেন মাহেদি। ১৭ বলে ১টি চারে ১১ রান করেন ক্রস। ২টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ২৯ রান করেন মুনসে।
দুই সেট ব্যাটসম্যানকে শিকার করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এতে স্কটল্যান্ডের মিডল-অর্ডারে ছোট ধস নামান মাহেদি ও সাকিব আল হাসান। সাকিব ২টি ও মাহেদি ১টি উইকেট নেন। এক পর্যায়ে ৫৩ রানেই ৬ উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড।
এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন ক্রিস গ্রেভস ও মার্ক ওয়াট। মারমুখী মেজাজে ব্যাট করে স্কটল্যান্ডকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেন গ্রেভস। ২৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন গ্রেভস। আর ১৭ বলে ২২ রান করেন ওয়াট। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪০ রান করে স্কটিশরা।
বাংলাদেশের মাহেদি ৩, মুস্তাফিজ-সাকিব ২টি করে এবং তাসকিন-সাইফুদ্দিন ১টি করে উইকেট নেন। ২টি উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এখন সাকিব। এতে পেছনে পড়ে গেলেন শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গা।
জয়ের জন্য ১৪১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৮ রানে দুই ওপেনার প্যাভিলিয়নে ফিরেন। লিটন দাস ও সৌম্য সরকার, দু’জনই ৫ রান করে করেন।
২১ বলে ২ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। সাবধানতার সাথে স্কটল্যান্ডের বোলারদের মোকাবেলা করকে থাকেন তারা। উইকেটে টিকে থাকাই মূল লক্ষ্য ছিলো সাকিব-মুশফিক জুটির । চতুর্থ ওভারে জুটি বাঁধার পর অষ্টম ওভার পর্যন্ত কোন বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি আদায় করতে পারেননি সাকিব-মুশফিক। নবম ওভারে পরপর দু’টি ছক্কা মারেন মুশফিক।
তবে ১২ ও ১৪তম ওভারে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথমে ২৮ বলে ২০ রান করা সাকিব এবং পরে ৩৬ বলে ৩৮ রান কর মুশফিক ইউট হন। সাকিবের ইনিংসে ১টি চার এবং মুশফিকের ইনিংসে ১টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
সাকিব-মুশফিকের বিদায়ে ৭৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে ৫৪ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। এসময় অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর সাথে উইকেটে ছিলেন আফিফ হোসেন। ১৭তম ওভারে ২টি চারসহ ১২ রান মাহমুদুল্লাহ-আফিফ।
১৮তম ওভারে আউট হন আফিফ। ২টি চারে ১২ বলে ১৮ রান করেন। আফিফ ফিরলেও, মাহমুদুল্লাহর ক্যাপ্টেন্স নকের অপেক্ষায় ছিলো বাংলাদেশ। সাথে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের শেষ দিকের ক্যামিও। যা আনঅফিসিয়াল ম্যাচে ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে করেছিলেন নুরুল।
কিন্তু ১৯তম বাংলাদেশের স্বপ্ন চুরমার করে দেন স্কটল্যান্ডের ডান-হাতি পেসার ব্র্যাড হুইল। দ্বিতীয় বলে নুরুলকে ও পঞ্চম বলে মাহমুদুল্লাহকে আউট করেন হুইল। ২২ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় মাহমুদুল্লাহ ২৩ ও নুরুল ২ রান করেন। এতে শেষ ওভারে জিততে ২৪ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের।
শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে সাইফুদ্দিনের বাউন্ডারি, এরপর মাহেদির ব্যাট থেকে চতুর্থ বলে ওভার বাউন্ডারি আসে। তাতেও স্কটল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া টার্গেটকে স্পর্শ করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৪ রান করে হার মানে টাইগাররা।
৫ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় মাহেদি অপরাজিত ১৩ এবং সাইফুদ্দিন ২ বলে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। স্কটল্যান্ডের হুইল ২৪ রানে ৩ উইকেট নেন।