নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৯ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার বিকালে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ শুরু করে। শুক্রবার ভোরের দিকে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু সকালে ভেতরে আবার আগুন বেড়ে যায়। সকাল সোয়া ১০টার দিকেও ছয় তলা কারখানা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার সামনের দিকে আগুন জ্বলতে দেখা যায় এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। প্রথম দিকে আগুনে পুড়ে তিনজনের মৃতু্য খবর জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় আহত হন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। কারখানার আগুন থেকে বাঁচতে ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন অনেকে। অনেকে ভেতরে আটকা পড়েন।
এ নিয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২ জনে। এছাড়া আহত হন আরও অন্তত অর্ধশতাধিক।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বলেন, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহত প্রত্যকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও গুরুতর আহতদের পরিবারকে দশ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ৪৯টি লাশ উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক জানান, শুক্রবার যেসব লাশ উদ্ধার হয়েছে তার প্রায় সবই এমনভাবে দগ্ধ যে সেগুলি আত্মীয়রা দেখে চিনতে পারছেন না। তাই এই মৃতদেহগুলি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে ডিএনএ টেষ্টের জন্য। ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে এ লাশগুলি সনাক্ত করে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রনে আনার পরে নিচ তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত তল্লাশী করে ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে এনে পুরো ভবনটিতে আমরা পুনরায় তল্লাশি চালাবো।
তিনি আরো জানান, আগুন লাগার পরপর এক থেকে তিন তলা পর্যন্ত আগুন লাগে। পরে চারতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। লাশ বেশিরভাগ চতুর্থ তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকের লাশ সিড়িতেও পাওয়া যায়।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার বলেন, সজিব কর্পোরেশনের হাসেম ফুড এন্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডে অনেকগুলি প্রাণ ঝড়ে পড়েছে। এ ঘটনায় যদি মালিক পক্ষের কোনো গাফিলতি পাওয়া যায় অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় এক বা একাধিক মামলা হবে। এ প্রতিষ্ঠানে যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগের প্রমান পাওয়া যায় তাহলে আলাদা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগুন নেভাতে ধীরগতির অভিযোগ তুলে কারখানার শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।
জানাগেছে,এ কারখানার ভেতরে সেজান জুসের পাশাপাশি নুডুলস, লাচ্ছি সেমাই, চকলেট, লাচ্ছি, কেক বিস্কুটসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরী ও প্যাকেটজাত করা হতো। এছাড়া ছয় তলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরেই ছিলো দাহ্য পদার্থ ও বিপুল পরিমান রাসায়নিক পদার্থের মজুদ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের রূপগঞ্জের কাঞ্চন, ডেমরা, আদমজী, ঢাকা, ও নারায়ণগঞ্জ স্টেশন থেকে ১৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতের কাজ করছে।
2 সকল মন্তব্য
[…] রূপগঞ্জে জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান… […]
[…] রূপগঞ্জে জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান… […]