ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস তাঁর ওপর নজরদারি করার অভিযোগ তুলেছেন। রাজ্যপালের অভিযোগ, তাঁর ওপর ‘স্নুপিং’ করা হচ্ছে বা ইন্টারনেটসহ তাঁর পুরো যোগাযোগব্যবস্থায় নজর রাখা হচ্ছে, যা একান্তভাবেই বেআইনি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।
ভারতের একটি সংবাদ সংস্থাকে মঙ্গলবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজ্যপাল এ অভিযোগ তোলেন। রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে ধারাবাহিক সংঘাতের মধ্যেই তিনি এই অভিযোগ তুললেন। যদিও তৃণমূল সরকারের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।
রাজ্যপালের দাবি, তাঁর কাছে কলকাতার রাজ্যপাল ভবনে (গভর্নর হাউস) স্নুপিং সম্পর্কে ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য’ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি সত্য। আমার কাছে রাজভবনে স্নুপিং সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে। সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমি ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করব।’ তবে কথিত স্নুপিং-চেষ্টার পেছনে কারা থাকতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি।
সার্বভৌম দেশে বিচার বিভাগের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ ছাড়া কোনো নাগরিকের ওপর নজরদারি করা যায় না। কেন্দ্র সরকার ভারতে এ ধরনের স্নুপিং একাধিক পেশাদার ব্যক্তির ওপর করেছে বলে অতীতে অভিযোগ করা হয়েছে। একই অভিযোগ নাম না করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার করলেন এই রাজ্যেরই রাজ্যপাল আনন্দ বোস।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্বসূরি জগদীপ ধনখড়ের (বর্তমানে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি) মতোই রাজ্যপাল আনন্দ বোসের ধারাবাহিক মতানৈক্য চলছে। অসংখ্য বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের রাজ্যপাল একমত নন, যে কারণে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে নানান সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে রাজ্য সরকার অভিযোগ করেছে। যেমন গত বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল অভিযোগ করেন, বাংলার রাজনীতিতে সহিংসতার সংস্কৃতি রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আইন তার পথে চলবে। আমরা অবশ্যই এই সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব এবং রাজভবনও তার দায়িত্ব পালন করবে। হিংসা বাংলার রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে। এই সহিংসতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।’ তাঁর এই মন্তব্যে অসন্তুষ্ট হয় তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এ ছাড়া একাধিক ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের বিরোধ বেড়েই চলেছে।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জি জানিয়েছিলেন, অন্তত ২২টি বিল রাজ্যপালের অনুমোদনের অভাবে বিধানসভায় পাস হয়েও পড়ে রয়েছে। এ কারণে সরকার অনেক কাজ করে উঠতে পারছে না।
মঙ্গলবার রাজ্যপাল তাঁর ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে নতুন অভিযোগ সামনে আনার পর তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার।