মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে গোলাগুলি, মর্টারশেল ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের পুরো সীমান্ত এলাকা।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় এখন প্রতিনিয়ত গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
বিশেষ করে তুমব্রু এলাকার জলপাইতলীতে দুজনের মৃত্যুতে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকে নিজ ঘর ও গ্রাম ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়ের বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্ত চৌকিটি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লোকালয়ের একদম কাছাকাছি। ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি থেকে বাংলাদেশের লোকালয় প্রায় ৫০০ মিটার দূরে। এ কারণে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে গোলাগুলির সময় বাংলাদেশের বসতঘরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপারে প্রচুর গোলাগুলি হচ্ছে আর গোলাগুলির ভয়ে আমাদের পরিবারের সবাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
তুমব্রু এলাকার সীমান্তের পাশে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে মো. আকতার তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে এসেছি। দিনের বেলায় বাড়িতে গরু ছাগল চুরি হবে তাই পাহারা দিচ্ছি। আর সন্ধ্যা হলে আমি দূরের আত্মীয়র বাড়ি চলে যাই।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজীজ বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কখনো একনাগাড়ে কখনো থেমে থেমে গুলি হচ্ছে। আর ওপারের গুলি আর মর্টার শেল এসে আমার ইউনিয়নের কয়েকজনের মৃত্যুর পাশাপাশি কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমার ইউনিয়নের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাধারণ জনগণকে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে ঘুমধুম, তুমব্রু ও কোনাপাড়ার প্রায় শতাধিক জনসাধারণ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
সীমান্তের এই সংঘাত ঘিরে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৪০ পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
মঙ্গলবার বিকেলে তিনি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে স্থানীয় প্রশাসনকে এই নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থী ও সীমান্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী ২৪০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তবর্তী স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হবে।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র প্রয়োজনে ঘুমধুম থেকে পরিবর্তন করে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে নেওয়া হবে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের এই সময়টা আরও সতর্ক হয়ে সংবাদ পরিবেশন করার পাশাপাশি সীমান্তের যে কোনো স্থানে বিস্ফোরিত ও অবিস্ফোরিত আগ্নেয়াস্ত্র থেকে দূরত্ব থেকে অবস্থান করে সংবাদ সংগ্রহের অনুরোধও জানান।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন।
সীমান্তের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, জেলা প্রশাসনসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইতোমধ্যে জনবল এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত: গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের সংঘর্ষ বেড়ে গেছে আর তাদের সংঘর্ষের মধ্যে নিক্ষিপ্ত মর্টারশেলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর জলপাইতলীতে দুইজনের মৃত্যু হয়।