নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন প্রতিরোধে এবার প্রায় ২ হাজার ৭০০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়ে গতকাল সোমবার চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে দেশের ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। তারা নির্বাচনী এলাকায় ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ ৩৮ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এতে প্রায় শতকোটি টাকার মতো ব্যয় হবে।
ইসির চিঠিতে তিনটি ইউনিয়নের জন্য একজন (দুর্গম ও দূরবর্তী দুটিতে একজন), বড় পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রতিটিতে চারজনসহ প্রতি পৌরসভায় তিনজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশনা এসেছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের প্রতি ৪/৫টি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় প্রতিটি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি ৩ থেকে ৪টি ওয়ার্ডের জন্য একজন, জেলা সদরে প্রতি পৌর এলাকায় এক থেকে দু’জন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। তবে এবার বিএনপি ও সমর্থিত জোটের দলসহ আরও অনেক নিবন্ধিত দল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
চিঠিতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি, এমন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সংশ্লিষ্ট উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব জায়গায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মরত নেই, সেসব স্থানে জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পাবেন।
এদিকে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন, ৩২৮টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশনে ২ হাজার ৭০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দরকার পড়বে। এত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একসঙ্গে নিয়োগ করা কতটা সম্ভব, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এত দীর্ঘ সময়ের জন্য এবং অধিক সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নামানোর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি নির্বাচনের বাজেট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এত টাকা খরচ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নামিয়ে ইসি কী অর্জন করতে চায়, সেটি তাঁর কাছে বোধগম্য নয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারাই মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। জানা গেছে, বর্তমানে জনপ্রশাসনে ১ হাজার ১৬৩ জন সহকারী সচিব ও ১ হাজার ৯৬৭ জন সিনিয়র সহকারী সচিব রয়েছেন। এ দুই পদে মোট কর্মকর্তার সংখ্যা ৩ হাজার ১৩০ জন। তাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪৯৫ জন ইতোমধ্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এই সংখ্যা বাদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা থাকে ২ হাজার ৬৩৫ জন। তাদের মধ্যে একটি অংশ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আবার কেউ ছুটি নিয়ে বিদেশে আছেন এবং কেউ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে প্রেষণে নিযুক্ত। এসব বাদ দিয়ে দায়িত্ব পালনের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দুই হাজারের কম-বেশি হতে পারে। অবশ্য সরকার চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদে উপসচিব বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদেরও নিযুক্ত করতে পারে। বর্তমানে সরকারের ১ হাজার ৬৫৮ জন উপসচিব, ৯৩৩ যুগ্ম সচিব, ৩৭১ জন অতিরিক্ত সচিব এবং ২৭ জন গ্রেড-১ ও ৮২ জন সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানা গেছে, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পেছনে দৈনিক ভাতা, যানবাহনের জ্বালানিসহ প্রতিদিন ৯-১০ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে। সে হিসাবে ২ হাজার ৭০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করলে ইসির ৯০ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহীন আরা বেগম বলেন, নির্বাচন কমিশনের চিঠি তিনি এখনও দেখেননি। তবে চাহিদা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩৭ দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়ার সক্ষমতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের রয়েছে।