ঢাকা: সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ-সৌদি পার্লামেন্ট ফ্রেন্ডশিপ কমিটির কো-চেয়ারম্যান খালেদ এম আল বাওয়াদ।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর সঙ্গে মজলিসে শুরায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়। খালেদ এম আল বাওয়াদ আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আরবদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও সহস্রাব্দ প্রাচীন এবং এ সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
এ সময় রাষ্ট্রদূত সৌদি আরবের যুবরাজ প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে সৌদি আরবের চলমান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সংস্কার এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গঠনমূলক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি রিয়াদে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০৩০ আয়োজনের এবং ২০৩৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ায় সৌদি সরকারকে অভিনন্দন জানান৷ তিনি বলেন, এটি অবশ্যই বিশ্ব পর্যায়ে সৌদি আরবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী আরও বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে সৌদি আরবের সঙ্গে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার বিষয়ে ১৫টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। অনেক চুক্তির খসড়া এবং সমঝোতা স্মারক আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী চলতি বছরের মার্চে ৫৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সৌদি আরব বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে একইসঙ্গে বাংলাদেশও সৌদি আরবে বিনিয়োগ করছে। সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে আজ বাংলাদেশ সফর করবেন। রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন এ ধরনের সফর ও উদ্যোগের কারণে দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
এ সময় শুরা সদস্য খালেদ এম আল বাওয়াদ বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক শ্রমিক যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন ও সৌদি অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছেন। এ ছাড়াও তারা দুই দেশের মানুষের মধ্যে মেল-বন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ সময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি শ্রমিকদের সৌদি আরবে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সৌদি নেতৃত্বের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতি ও উন্নতি সাধিত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন, নাগরিকদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এখন রয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, নিজস্ব স্যাটেলাইট, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সমাদর। তিনি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স এবং বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ও অবদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও দুই দেশ সহযোগিতা করেছে। তিনি ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে সৌদি নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।তিনি জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে গত ৩০ অক্টোবর গাজায় চলমান ইসরাইলের ধ্বংসযোগ্যের নিন্দা জ্ঞাপন ও তা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একটি রেজুলেশন পাস হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ-সৌদি পার্লামেন্ট ফ্রেন্ডশিপ কমিটি সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত করতে ভূমিকা রাখবেন। তিনি জানান, আগামী ৭ জানুয়ারি ১২তম বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সৌদি সরকারকে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন।
১২তম জাতীয় নির্বাচনের পর, সংসদীয় মৈত্রী কমিটির জন্য বাংলাদেশের সদস্য নির্ধারণ হওয়ার পরে এই কমিটির নিয়মিত বৈঠক এবং নিয়মিত সফর ও মত বিনিময়ের জন্য আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত। এ সময় সৌদি মৈত্রী কমিটির সভাপতি খালেদ এম আল বাওয়াদ বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে মর্মে আশা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের সংসদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে তার কমিটি কাজ করবে বলে জানান।
মজলিসে শুরায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ-সৌদি পার্লামেন্ট ফ্রেন্ডশিপ কমিটির সৌদি পক্ষের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।