ফিলিস্তিনের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার নিন্দা এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানিয়ে গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে আনা একটি সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করে জাতীয় সংসদ।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বড় দেশ ছিল, ধীরে ধীরে তা দখল করতে করতে এখন ক্ষুদ্র একটি অংশ তাদের (ফিলিস্তিন)। তারপরও একটি প্রস্তাব ছিল টু স্টেট ফর্মুলা। এটাও তারা (ইসরায়েল) মানছে না। আমাদের কথা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের ন্যায্য দাবি যেন মেনে নেওয়া হয়। তাদের রাষ্ট্র যেন তারা ফেরত পায়। সেটা আমরা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মানবাধিকারের কথা শুনি। অনেক কিছু শুনি। আমাদের প্যালেস্টাইনের জনগণ অমানবিক জীবন যাপন করছে। সেখানে হাসপাতালকে নিরাপদ মনে করে মা তাদের সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানেই ইসরায়েলের বাহিনী এয়ার অ্যাটাক (বোমা হামলা) করে। বোম্বিং (বোমা বিস্ফোরণ) করে। নারী-শিশুকে হত্যা করে। একটা জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। এর নিন্দার ভাষা নেই। হাসপাতালের মতো জায়গায় তারা কী করে হামলা করতে পারল? মানুষ হত্যা করতে পারল?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যখনই যে আন্তর্জাতিক ফোরামে গেছেন, ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনিদের জন্য বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে ওষুধ, খাদ্য এবং নারী-শিশুদের জন্য পণ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেটা ফিলিস্তিনে সরাসরি পৌঁছানোর সুযোগ নেই। মিসরে এসব পাঠানো হয়েছে। তারা সেখান থেকে পৌঁছে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় খাবার-পানি সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে অমানবিক যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে মানুষ হাহাকার করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরব লিগের সঙ্গে আমরা স্পনসর (যৌথ প্রস্তাবে যুক্ত থাকা) হয়ে জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছি। সেখানে ১২০ দেশ আমাদের সমর্থন দিয়েছে। আমরা চাই অন্তত সেবা খাত খোলা হোক। যাতে ওখানকার মানুষগুলো বাঁচতে পারে। সেই সেবা খাতটা বন্ধ করে কষ্ট দিচ্ছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর যা ঘটাচ্ছে, তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না।’
সংসদে সাধারণ প্রস্তাবটি এনেছিলেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তাঁর আনা প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েল পরিচালিত নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে এবং এই হত্যাকাণ্ড বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মানবাধিকারের চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এই সংসদ ফিলিস্তিনে মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষ, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা এবং তাদের ন্যায়সংগত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কার্যকরভাবে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা ইসরায়েলের পক্ষে। আইসিসি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। কিন্তু গাজায় হাসপাতালে বোমা হামলা, অসংখ্য শিশু হত্যার ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিএনপি ‘টুঁ শব্দও’ করেনি বলে উল্লেখ করেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ইসরায়েল গাজার হাসপাতালে হামলা করেছে। সেটির বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কোনো কথা বলেনি; বরং তার অনুকরণে পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, একটি শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রধান ইসরায়েলে গিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন। হামাসের নিন্দা করেছেন। কিন্তু হাসপাতালে হামলা ও নারী-শিশু হত্যার নিন্দা করেননি।
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এ কে আব্দুল মোমেন, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, রুস্তম আলী ফরাজী, মসিউর রহমান, তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। পরে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়।