বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা দেশের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপি মানেই হচ্ছে অত্যাচার–নির্যাতন আর দেশে দুঃশাসন, লুটপাট, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ বাংলা ভাই—এটাই।’ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামাত জোট নারীর ক্ষমতায়নেই বিশ্বাস করে না। আমরা নারী উন্নয়ন নীতি করলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটা স্থগিত করে দিল। এমন কিছু পরিবর্তন নিয়ে এল যে নারীর কোনো ক্ষমতাই থাকে না। বিএনপির কার্যক্রম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের নারীদের যেভাবে অত্যাচার করেছে, মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে। বিএনপি-জামাত যখন ক্ষমতায় এল, মনে হলো যেন সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, সেই অত্যাচার ও গণহত্যার পুনরাবৃত্তি। নারী নির্যাতনের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছয় বছরের ছোট শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা, কেউ তাদের কাছ থেকে রেহাই পায়নি। কত মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কত মেয়ে নির্যাতনের ফলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে। মেয়েদের ওপর তাদের জুলুম–অত্যাচার ওই সময়ের ঘটনাগুলো যদি ৭১–এর ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হয়, আমি কোনো তফাত দেখি না।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, আবার সেই দুঃশাসন। আমরা আমাদের আওয়ামী লীগ অফিসে যেতে পারতাম না। কোনো রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। একদিকে পুলিশ বাহিনী, অন্যদিকে ছাত্রদল–বিএনপির সেই গুন্ডা বাহিনী দিয়ে অকথ্য নির্যাতন করেছে মেয়েদের ওপর। তারা যেভাবে নির্যাতন করেছে, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সে অন্তঃসত্ত্বা হোক, সদ্যপ্রসূতাই হোক, কেউ তাদের কাছ থেকে রেহাই পায়নি। রাস্তায় ফেলে কাপড় ছিঁড়ে চুল টেনে মেরে অত্যাচার–নির্যাতন করা হয়েছে। অত্যাচার ছাড়া দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনোভাবেই কী ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেছে? উঠে নাই। কেউ কোনো প্রশ্ন করে নাই। ওই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি তখন কয়টা আসন পেয়েছিল? বিএনপি নেতারা হয়তো সেটা ভুলেই গেছে। বিএনপি মাত্র ৩০ আসন। আর জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ২৭টি আসন। তিন আসন বেশি ছিল বলেই খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেত্রী হতে পেরেছিল। বিএনপির নেতাদের জিজ্ঞেস করি, এত যে লাফালাফি কিসের জন্য? আপনারা কী নিয়ে লাফান ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা মানুষ পুড়িয়ে মারার আন্দোলন ডাকল জানিয়ে তিনি বলেন, তখন আবার শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে তিন হাজারের বেশি মানুষকে পুড়িয়েছে। হাজার গাড়ি-লঞ্চ পুড়িয়েছে, শিক্ষার্থীদের পুড়িয়েছে। খালেদা জিয়ার অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে কত মানুষের মুখ পুড়ে বিকৃত হয়েছে। তারা এমনই তাণ্ডব চালিয়েছে। সাক্ষরতার হার কমে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে সাক্ষরতার হার ৪৫ ভাগে নেমে গিয়েছিল। অবশ্য এটার কারণ আছে। খালেদা জিয়া একবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল। উর্দু আর অঙ্ক এই দুই বিষয়ে পাস করেছিল। আর কোনো পাস নেই, ফেল। উর্দু খুব প্রিয় সাবজেক্ট তার। কারণ পাকিস্তানপ্রীতি। আর টাকা গোনা—এ জন্য অঙ্কে পাস। এ ছাড়া আর কোনো সাবজেক্টে পাস করেনি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ইন্টারমিডিয়েট পাস। আর তারেক জিয়া যে কি পাস, তারও কোনো ঠিকানা নাই। তো তাদের কথা হচ্ছে আমরা পড়ি নাই যেহেতু, তোরা পড়বি কেন? তাই ৬৫ ভাগ থেকে সাক্ষরতার হার কমিয়ে ৪৫ ভাগে নামিয়ে এনেছিল। আর আমরা নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ করার জন্য বয়স্ক শিক্ষার যে প্রকল্প নিয়েছিলাম, সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ সামনের দিকে যায়, উন্নয়নের ধারা আরও সামনের দিকে অগ্রসর হয়। আর বিএনপি এলে দেশটা চলে পেছনের দিকে। উন্নয়ন শেষ হয়ে যায় এবং উন্নয়ন শুধু তাদেরই হয়। হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া ভবন খুলে শুধু খাই খাই করে, দেশের জন্য কিছু করতে পারে না। যার জন্য দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ওই অগ্নিসন্ত্রাসী ও ভুয়া
ভোটার তালিকায় করা নির্বাচনকারী বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল। মানুষ সেই নির্বাচন শুধু প্রত্যাখ্যানই করেনি, এমন আন্দোলন করেছিল যে খালেদা জিয়া দেড় মাসের মধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন অর্থাৎ ওরা ক্ষমতায় গেলেই নির্বাচন নিয়ে, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, এটা বিএনপির চরিত্র। কারণ একটাই, ওরা তো গণমানুষের দল না। ওরা তো মানুষকে পরোয়া করে না। ক্ষমতা ওদের কাছে ভোগের বস্তু। লুটের সুযোগ। আর বাংলাদেশের মানুষ তাদের কাছে কিছুই না। দেশের মানুষ জানে এই আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের মাধ্যমে।, বিএনপি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় কেবল আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই। কারণ, আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করি। আর বিএনপি ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। ওরা গণমানুষের দল নয়, ওরা মানুষকে পরোয়া করে না। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারুণ্যের শক্তি দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তৃণমূল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা হবে, সেভাবে কাজ চলছে। দক্ষিণ অঞ্চল একসময় অবহেলিত ছিল, এখন আর নেই। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না।’