তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের সংস্কৃতি ও ওটিটি প্লাটফর্মগুলোর সুরক্ষার জন্যই সরকার নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওটিটি প্রাটফর্মের অংশীজনদের সাথে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘এই নীতিমালা তৈরির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু যেন ওটিটি প্লাটফর্মে না যায় এবং আমাদের সমাজ ও নতুন প্রজন্মকে বিপথগামী করতে পারে এমন কিছু যাতে আপলোড না হয়। আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিদেশি ওটিটি প্লাটফর্মগুলোর আগ্রাসন থেকে দেশের প্লাটফর্মগুলোকে সুরক্ষা দেয়া। একইসাথে আমাদের সরকার চায়, এই প্লাটফর্ম এবং এর মাধ্যমে আমাদের বিনোদন ও সৃজনশীলতা আরো বিকশিত হোক।’
ওটিটি প্লাটফর্ম কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয় উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘কেউ কেউ কেন যে এটিকে রাজনীতিতে টেনে আনেন! আশ্চর্যের বিষয়, মির্জা ফখরুল সাহেব ওটিটি প্লাটফর্মকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। এতো বড় দলের মহাসচিব যিনি মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন, তিনি এগুলো গুলিয়ে ফেললেন দেখে আমার নিজেরই লজ্জা লেগেছে। তার পরামর্শকদের উচিত ছিলো ঠিক পরামর্শ দেয়া এবং তার নিজেরও জেনেশুনে কথা বলা প্রয়োজন ছিলো বলে মনে করি। কিন্তু তিনি এটিকে রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা করেছেন। সবকিছুর মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসা কখনো সমীচীন নয়।’
ওটিটি প্লাটফর্মের অংশীজনদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের ধন্যবাদ, আমাদের এই উদ্যোগকে আপনারা সমর্থন জানিয়েছেন। আপনাদের জন্যই এই নীতিমালা। অতীতে দেখেছি ওটিটি’র এমন কিছু জিনিস আমাদের আপামর জনতা ও তরুণ প্রজন্মের কাছে এসেছে, যেগুলো আমাদের মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানে এবং অনেকগুলো পর্নোগ্রাফির কাছাকাছিও ছিলো, যেগুলো নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। তখন একটি নীতিমালার দাবি উঠেছিলো। ইতোমধ্যে দেশে কয়েকটি ওটিটি প্লাটফর্ম কার্যক্রম শুরু করেছে এবং আস্তে আস্তে ভালো করছে। এটি বড় প্লাটফর্ম, প্রতিটি কনটেন্ট দেখে সেন্সরের ব্যবস্থা করা সম্ভবপর নয়। সেজন্য অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে আমরা একটা নীতিমালা তৈরির করছি, খসড়াটি ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে, আরো মতামত নেয়া হচ্ছে। এরপর এটি চূড়ান্ত হবে।’
নাট্যকার সংঘের সভাপতি এস এম হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমি কি লিখছি সে লেখাটা আমার শিল্প-সংস্কৃতি, আমার ইতিহাস। ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার, ঐতিহ্যবোধ এবং দায়িত্ববোধের জায়গাটা সুদৃঢ় করার জন্য নীতিমালার প্রয়োজন।’ ডিরেক্টরস গিল্ড সভাপতি সালাহউদ্দীন লাভলু বলেন, ‘আমাদের যে ঐতিহ্য, আমাদের গৌরবোজ্জ্বল যে সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এই সবগুলোই আসলে আমাদের নাটকের মাধ্যমে ওটিটি কনটেন্টে আমরা তুলে ধরতে চাই। সেজন্য সেখানে একটি জাতীয়ভাবে নীতিমালা অবশ্যই প্রয়োজন আছে।’
টেলিভিশন এন্ড ডিজিটাল প্রডিউসার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন দোদুল বলেন, ‘ওটিটির জন্য অবশ্যই নীতিমালা চাই, সেটা তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী পূরণ করছেন। কারণ পেশাগত জায়গায় শৃঙ্খলা খুব দরকার। এটি নিয়ে অন্য কারো কিছু বলার নেই, আমরা এখাতের পেশাজীবী। এটার সাথে আমার পিতা, আমার ভাই আমার স্ত্রী এবং আমি নিজেও এ পেশায় জড়িত। আমরা কাউকে কিছু বলতে বলিনি। আমাদের কোনো সমস্যা হলে আমরা সুন্দরভাবে প্রতিবাদ করতে জানি।’