বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সব ধরনের ভিসা আবেদন গ্রহণের জন্য ঢাকায় অন্তত একটি কনস্যুলার সার্ভিস সেন্টার খুলতে পর্তুগালের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এটা পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া ও প্রবাসী বাংলাদেশীদেও পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলনকে সহজ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ পর্তুগাল ও কেনিয়ার যৌথ-আয়োজনে চলমান দ্বিতীয় জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন ২০২২ এর ফাঁকে শুক্রবার পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জোয়াও গোমেজ ক্রাবিনহোর সাথে লিবসনে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠককালে মোমেন এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ লিসবনে গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিচালনা করে আসছে এবং সম্প্রতি মিশনটির স্থায়ী ঠিকানার জন্য সেখানে জমিও ক্রয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ-পর্তুগান কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশে পর্তুগালের একটি চ্যান্সারি খোলা হবে সবচেয়ে উপযুক্ত সৌজন্য।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটা দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। বৈঠককালে, পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার উপায় বের করতে পরস্পরকে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
শোড়ষ শতকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বন্ধুপ্রতীম দেশ দুটির উচিত তাদের পারস্পারিক স্বার্থে ইতিহাসের এই ইতিবাচক সম্পর্কের ভিত্তিতে বর্তমান সময়ে সহযোগিতার আরো জোরদার করা। এ সময় তিনি বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ, সমুদ্র অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানী এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশেষত নারী ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পাশাপাশি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবগত করেন। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের অন্যতম প্রমত্তা নদীর উপর সদ্য-উদ্বোধনকৃত পদ্মাসেতু, নতুন বাংলাদেশের প্রতীক। এই বাংলাদেশ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম। পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তার দেশের ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেন।
পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরামর্শগুলো শুনেন এবং এর ওপর কাজ করার আশ্বাস দেন। তিনি বাংলাদেশী প্রবাসী সম্প্রদায়কে পর্তুগাল সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পর্তুগালের অর্থনীতিতে তারা অবদান রাখছে বলে অভিহিত করেন।
উভয় দেশই দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক পর্যায়ে ‘জলবায়ু শরণার্থী’ পুনর্বাসনের মতো জলাবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসাতে কাজ করতেও সম্মত হয়। দুই মন্ত্রী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়নের বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
এ সময় মোমেন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক প্লাটফরমে পর্তুগাল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের জন্য পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানালে, তিনি তা স্বাদরে গ্রহণ করেন।
বৈঠককালে মোমেনের সাথে লিসবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্র সম্পর্কিত ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব) মোঃ খুরশেদ আলম ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।