প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অষ্টম আসরে প্রথম জয়ের দেখা পেল মাহমুদুল্লাহ-তামিমের মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা।
গতকাল নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ঢাকা ৪ উইকেটে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালকে। পক্ষান্তরে জয় দিয়ে আসর শুরু করলেও নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে হারলো বরিশাল।
প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রান করে ফরচুন বরিশাল। জবাবে ১৫ বল বাকী রেখে জয় তুলে নেয় ঢাকা।
প্রথম দুই ম্যাচ হারের স্বাদ নিয়ে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দেখেশুনের ফরচুন বরিশালের ইনিংস শুরু করেন দুই ওপেনার সৈকত আলি ও নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ৩ ওভারে ১৬ রান উঠে। ১টি করে চার ও ছক্কা মারেন ইনিংসের প্রথম বলেই জীবন পাওয়া সৈকত।
চতুর্থ ওভারে তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন শান্ত। তবে পরের ডেলিভারিতে ৫ রান করা শান্তকে বিদায় করেন স্পিনার শুভাগত হোম।
পঞ্চম ওভারে সৈকতকে ১৫ রানে বিদায় করেন বাঁ-হাতি স্পিনার হাসান মুরাদ। পরের ওভারে তৌহিদ হৃদয়কে খালি হাতে ফেরান ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল। এতে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বরিশাল।
সেখান থেকে দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ব্যাটার ক্রিস গেইল। ধীরে ধীরে জুটি বড় করছিলেন তারা। জুটিতে ৩৭ রান তোলার পর ১২তম ওভারে সাকিবকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন পেসার রুবেল হোসেন। ১৯ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৩ রান করেন সাকিব।
রুবেলের কাছ থেকে ব্রেক-থ্রু পেয়ে পরের ওভারে আক্রমনে এসে দলকে উইকেট উপহার দেন ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে দলে ফেরা উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানন সোহানকে ১ রানে বিদায় দেন মাহমুদুল্লাহ। ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দেন নুরুল।
এরপর দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছিলেন গেইল। ৩টি চার ও ১টি ছক্কাও মেরেছিলেন তিনি। মাহমুদুল্লাহর বলে ১৫তম ওভারের শেষ বলে গেইলের ক্যাচ ফেলেন মুরাদ। সেটি পরে ছক্কা হয়।
১৬তম ওভারে শ্রীলংকার ইসুরু উদানার বলে মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩০ বলে ৩৬ রান করেন গেইল।
ঐ ওভারে বরিশালের আরেক হার্ড-হিটার জিয়াউর রহমানও ১ রানে ফিরেন। এতে ৯৬ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বরিশাল। এ অবস্থায় ব্যাট হাতে ২৬ বলে অপরাজিত ৩৩ রান তুলে বরিশালকে সম্মানজনক স্কোর এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো। তার ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রান পায় বরিশাল। ঢাকার রাসেল-উদানা ২টি করে, রুবেল-শুভাগত-মুরাদ ও মাহমুদুল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৩০ রানের টার্গেটে জবাব দিতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে ঢাকা। ১৭ বলের ব্যবধানে ১০ রানে ৪ উইকেট হারায় তারা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে তামিম ইকবালকে বোল্ড করেন বাঁ-হাতি পেসার শফিকুল ইসলাম। প্রথম দুই ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি করা তামিম আজ রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
আরেক ওপেনার আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদকে ৫ রানে আটকে দেন শফিকুল। শফিকুলের পর ঢাকার মিডল-অর্ডারে জোড়া আঘাত হানেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার আলজারি জোসেফ। মোহাম্মদ নাইমকে ৪ ও জহিরুল ইসলামকে শুন্য হাতে বিদায় করেন জোসেফ।
শুরুতেই মহা বিপদে পড়া ঢাকাকে লড়াইয়ে ফেরাতে পঞ্চম উইকেটে বড় জুটি গড়েন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও শুভাগত হোম। দেখেশুনে খেলেএই জুটিতে ৬২ বলে ৬৯ রান যোগ করে এ জুটি।
১৪তম ওভারের প্রথম বলে শুভাগতকে শিকার করে বরিশালকে খেলায় ফেরার পথ দেখান ব্রাভো। মিড-অফে দৌঁড়ে দারুন ক্যাচ নেন তাইজুল। ২৫ বলে ২টি চারে ২৯ রান করেন শুভাগত।
শুভাগতর বিদায়ের সময় জয়ের জন্য ৪১ বলে ৫১ রান দরকার ছিলো ঢাকার। তখন উইকেটে আসেন হার্ড-হিটার রাসেল। জোসেফের করা ১৫তম ওভার থেকে ১৯ রান তুলেন রাসেল-মাহমুদুল্লাহ। এরমধ্যে রাসেল ১টি করে চার-ছক্কা এবং মাহমুদুল্লাহ ২টি চার মারেন।
বরিশালের স্পিনার তাইজুল ইসলামের ১৭তম ওভারে রাসেলের ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬ রান পায় ঢাকা। এতে জয় থেকে ৭ রান দূরে ছিলো ঢাকা।
১৮তম ওভারে সাকিবের প্রথম বলে ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা আদায় করে স্কোর সমান করে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ। তবে পরের বলেই এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন মাহমুদুল্লাহ। এই শিকারের মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি ৪শ উইকেট পূর্ণ হয় সাকিবের।
এরপর ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটার উদানা ১ রান নিয়ে ঢাকার জয় নিশ্চিত করেন। ৪৭ বলে ৪৭ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি।
রাসেল ১৫ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজের ঝড়ো ইনিংসটি সাজান রাসেল। বরিশালের শফিকুল-জোসেফ ২টি করে, সাকিব-ব্রাভো ১টি করে উইকেট নেন।
বল হাতে ২ উইকেট ও ব্যাট হাতে অপরাজিত ৩১ রানের সুবাদে ম্যাচ সেরা হন ঢাকার রাসেল।