২০০ রানের লক্ষ্যটা তখন হয়ে দাঁড়ায় পাহাড়সম। চেন্নাইয়ের উইকেট ইঙ্গিত দিচ্ছিল লো-স্কোরিং থ্রিলার ম্যাচের। কিন্তু তা ছাপিয়ে আরেকটি মাস্টারক্লাস ইনিংস উপহার দিলেন বিরাট কোহলি। রান তাড়ায় কেন তিনি সেরাদের সেরা এর প্রমাণ দিলেন আবারও। অপর প্রান্তে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন লোকেশ। এই জুটির বীরত্বে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে স্বাগতিক ভারত।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারম স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কিন্তু তার সিদ্ধান্ত দলটির জন্য বুমেরাং হয়ে আসে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ওপেনার মিচেল মার্শের উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় পেসার জসপ্রিত বুমরাহর বলে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে রানের খাতাও খুলতে পারেননি মার্শ। এরপর দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ মিলে ৬৯ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন। ব্যক্তিগত ১৬ রানে একটি রেকর্ডও ভাঙেন ওয়ার্নার।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম ১ হাজার রানের কীর্তি এখন ওয়ার্নারের দখলে। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে ১৯ ম্যাচ লেগেছে তার। এর আগে সমান ২০টি করে ম্যাচ খেলে এই মাইলফলক পেরিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। তবে কীর্তি গড়ার ম্যাচে বেশিদূর যেতে পারেননি ওয়ার্নার। ফিরেছেন ব্যক্তিগত ৪১ রানে। ফিফটির দেখা পাননি স্মিথও। ৭১ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলে ভারতীয় স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন অজি টপ অর্ডার ব্যাটার।
স্মিথ ও ওয়ার্নারের বিদায়ের পর কার্যত ভেঙে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৭ রান করেছেন মার্নাস লাবুশেন। এছাড়া ১৫ রান করে করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ৪৯.৩ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
বল হাতে ভারতের সবচেয়ে সফল বোলার জাদেজা। ১০ ওভারে ২৮ রান খরচে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া ২টি করে উইকেট গেছে কুলদিপ যাদব ও বুমরাহর ঝুলিতে। ১টি উইকেট পেয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় ভারত। প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের শিকার হন ইশান কিশান (০)। এরপর দ্বিতীয় ওভারে অধিনায়ক রোহিত শর্মা (০) ও শ্রেয়াস আইয়ারকে (০) সাজঘরে ফেরান আরেক পেসার জশ হ্যাজেলউড। ব্যাটিংয়ে ব্যাকফুটে থাকা অজিরা ফিল্ডিংয়ে নেমেই যেন প্রাণ ফিরে পেল। কিন্তু তাদের পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যান কোহলি ও রাহুল। সতর্কতার সঙ্গে খেলতে খেলতে জয়ের ভীত গড়ে দেন তারা। তবে ১৬৫ রানের এই জুটি আগেই ভাঙার সুযোগ পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। অষ্টম হ্যাজেলউডের বলে কোহলির ক্যাচ ছাড়েন মার্শ। সঙ্গে যেন ম্যাচটাও হাতছাড়া করে ফেলেন তিনি।
কোহলি অবশ্য পরে হ্যাজেলউডেরই শিকার হন। কিন্তু সাজঘরে ফেরার আগে ১১৬ বলে ৬ চারে ৮৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন তিনি। এরপর বাকিটা পথ হার্দিক পান্ডিয়াকে (১১) নিয়ে নির্বিঘ্নেই পাড়ি দেন রাহুল। ৫২ বল হাতে রেখেই দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। যদিও সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি তার। কেননা ম্যাচশেষে ১১৫ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৯৭ রানে অপরাজিত ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়ে সেঞ্চুরি মিস করার আক্ষেপটা হয়তো ভুলে যাবেন তিনি।