পথ হারানো আফগানিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান যেন হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। অনেকটা অযথাই নিজের উইকেট দিলেন জাকির হাসান।
কিন্তু তাতে আফগানিস্তানের জন্য বদলালো না কিছুই। শান্ত দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন, তিন অঙ্ক ছোঁয়ার ২৬ মাসের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হয় মুমিনুল হকেরও। বড় রান তাড়া করতে নেমে আফগানদের শুরুটাও হয়েছে বিবর্ণ।
মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। শুক্রবার তৃতীয় দিনশেষে জয়ের জন্য ৮ উইকেট হাতে নিয়ে সফরকারীদের দরকার ৬১৭ রান। প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রান করা বাংলাদেশ দ্বিতীয়টিতে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪২৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। ৬৬২ রান তাড়া করতে নেমে এখন অবধি ২ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান করেছে আফগানরা। তাতে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ।
শান্ত ও জাকির দুজনেই হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন দ্বিতীয় দিনে। তৃতীয় দিনেও তাদের ব্যাটে শুরুটাও হয়েছিল দারুণ। জাকিরের সঙ্গে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে তোলেন শান্ত। আফগানিস্তানের বোলাররা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন, রানও আসছিল ওয়ানডে গতিতে। সফরকারী বোলাররা না পারলেও নিজেদের ভুলে উইকেট দিয়ে আসে বাংলাদেশ।
হাশমতউল্লাহ শহীদির অফ স্টাম্পের বাইরের বল জাকিরের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে ডিপ থার্ড ম্যান অঞ্চলে যায়। প্রথম দুই রান অনায়াসে নেওয়ার পর তৃতীয় রানের জন্য দৌড় শুরু করেন শান্ত-জাকির। ডাক দেওয়া জাকিরই পরে ইব্রাহিম জাদরানের থ্রো ধরে আফসার জাজাই স্টাম্প ভাঙলে আউট হন। ১৭৩ রানের জুটি ভেঙে যায় তাতে। ৯৫ বলে ৮ চারে ৭১ রান করেন জাকির।
জাকির বিদায় নিলেও শান্ত ঠিকই সেঞ্চুরির দেখা পান। এই ব্যাটার তিন অঙ্ক ছুঁয়েই হাত মেলান ব্যাটিংয়ে তার সঙ্গী মুমিনুল হকের সঙ্গে। শান্ত তাকে ছুঁয়েছেন রেকর্ড বুকের পাতায়ও। পাঁচ বছর আগে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল, এবার করলেন শান্ত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল। তখন তিনি ১৭৬ ও ১০৫ রান করেন। মুমিনুলের পাঁচ বছর পর এবার আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রান করেন শান্ত। ১১৫ বল খেলে দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন তিনি।
শান্ত ফেরেন জাহির খানের বলে। ফ্লিক করে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে মিডউইকেটে দাঁড়ানো আব্দুল মালিকের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এর আগে ১৫ চারে ১২৪ রান করেন শান্ত। দুই ইনিংস মিলিয়ে এই ব্যাটার করেন ২৭০ রান। শান্ত বিদায়ের পর মুমিনুলও দীর্ঘ অপেক্ষার পর পান সেঞ্চুরির দেখা।
প্রায় ২৬ মাসের অপেক্ষা শেষ হয় তার। ড্রেসিং রুমের দিকে ব্যাট উঁচিয়ে ও লিটন দাসকে জড়িয়ে ধরে উদযাপন সারেন তিনি। ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন মুমিনুল। দেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিও তার। ২০২১ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলে টেস্টে ১২৭ রান করেছিলেন মুমিনুল। এরপর আর সেঞ্চুরির দেখা পাননি। এই সময়ের ভেতর তিনবার হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান অধিনায়ক লিটন দাস। তিনি ৮১ বলে ৬৬ ও মুমিনুল হক ১৪৫ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১৪৫ বলে ১২১ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করেন।
প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি আফগানিস্তানের। প্রথম বলে উইকেট নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার পাশে নাম লেখান শরিফুল ইসলাম। ইব্রাহিম জাদরানকে প্রথম বলে এলবিডব্লিউ করে টেস্টে দেশের হয়ে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসের প্রথম বলে উইকেট নেন তিনি।
আফগানদের আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার আব্দুল মালিকও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ৭ বলে ৫ রান করে তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর আফগানদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদির মাঠ ছাড়া।
তাসকিন আহমেদের বাউন্সার সরাসরি তার মাথায় গিয়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মাঠেই কিছুক্ষণ চিকিৎসা দেওয়ার পর অবশ্য হেঁটেই রিটায়ার্ড হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন হাশমতউল্লাহ। ৩২ বলে ১০ রান করা রহমত শাহ ও ১৫ বলে ৫ রান করা নাসির জামিল আফগানদের হয়ে চতুর্থ দিন শুরু করবেন।