চীনে এই প্রথম করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সোমবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে এক ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে টেস্ট করাতে আসেন। টেস্টের জন্য দেওয়া নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- ওই ব্যক্তি ওমিক্রনে আক্রান্ত। বর্তমানে তিনি তিয়ানজিনের একটি হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক দেশ চীন। এই ব্যাপারটিকে সামনে রেখে করোনার সম্ভাব্য ঢেউ প্রতিরোধে ব্যাপক আকারে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার।
দেশের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে ইতোমধ্যে চীনের মন্ত্রিসভা বা স্টেট কাউন্সিল তিয়ানজিনসহ দেশের সব বন্দর শহরগুলোতে করোনা বিধিনিষেধ জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া রাজধানী বেইজিং ও তার আশপাশের ১৪০ কিলোমিটার এলাকাতেও কঠোর করা হয়েছে কোভিড প্রটোকল।
করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে সর্বপ্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়, করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটে উহানে।
তবে এই শহরের কোনো অঞ্চলে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী দেখা গেছে- তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত চীনের সরকার ও আন্তর্জাতিক মহামারি এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
চীনের সরকার দৃঢ়ভাবে বলেছে- উহানের সি ফুড মার্কেট থেকেই ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এবং মানবদেহে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে বাদুড়-প্যাঙ্গোলিন বা এই জাতীয় কোনো বন্যপ্রাণীর দেহ থেকে।
প্রসঙ্গত, সি ফুড মার্কেটে গৃহ পালিত ও সামুদ্রিক নানা প্রাণীর পাশপাশি জীবিত বা প্রক্রিয়াজাত বন্যপ্রাণীর মাংসও বিক্রি হতো। মহামারি শুরুর পর অবশ্য মার্কেটটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে চীনের সরকার।
অবশ্য চীন সরকারের বক্তব্য নিয়ে ঘোরতর সন্দেহে আছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম উহানে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। যিনি প্রথম শনাক্ত হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন উহানের ভাইরাস ও জীবাণু বিষয়ক গবেষণাগারের হিসাবরক্ষক।
উহানের সি ফুড মার্কেটের সঙ্গে ওই গবেষকের কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে- উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ সরাসরি দাবি করেন, সি ফুড মার্কেট থেকে নয়; উহানের গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাস।
তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার বাস্তুসংস্থান ও জৈব বিবর্তন বিভাগের প্রধান মাইকেল ওরোবে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছেন। মার্কিন বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী সায়েন্সে ছাপাও হয়েছে সেই গবেষণা প্রতিবেদন।
মাইকেল ওরোবে তার গবেষণা প্রবন্ধে বলেন, উহানে প্রথম আক্রান্ত রোগী ১৬ ডিসেম্বর নয়, শনাক্ত হয়েছিল তার চার দিন আগে, ১১ ডিসেম্বর।
তিনি আরও বলেন, প্রথম যে ব্যক্তি এই রোগে শনাক্ত হন- তিনি একজন নারী এবং সি ফুড মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় প্রতিদিনিই তাকে সেই মার্কেটে যেতে হতো।
এদিকে, গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ববাসীকে প্রথম করোনার রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য এক গবেষণায় জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ধরনটির ব্যাপারে বিশ্বকে জানানোর ৫ দিন আগে, নেদারল্যান্ডসে এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৬৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন।