তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রেই মানবাধিকারের চরম লংঘন হয় এবং অন্যদের ওপর তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা একপেশে এবং অকার্যকর।
তিনি গতকাল দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়ন্সেস-ইউআইটিএস এর শরৎকালীন নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাশেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভাতেও প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এবিষয়ে আলোকপাত করেন তথ্যমন্ত্রী।
গত শুক্রবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর বিশ্বের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ সংস্থাকে মানবাধিকারের চরম লংঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার মধ্যে র্যাব ও সংশ্লিষ্ট ৬ কর্মকর্তার নাম থাকা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, পরে তাকেই আবার লাল গালিচা অভ্যর্থনা দিয়েছে, যা প্রমাণ করে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রকৃতপক্ষে অকার্যকর।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এবছরেরই ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্যাতন এবং প্রক্রিয়াগত বর্ণবাদী বৈষম্য বন্ধে মার্কিন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। অক্টোবরে দা গার্ডিয়ান পত্রিকার এক নিবন্ধে বলা হয়, ১৯৮০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি হেফাজতে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে ৫৫ শতাংশ মৃত্যুই ‘আনরিপোর্টেড’ অথবা ‘মিসলেবেলড’, অর্থাৎ এসব মৃত্যুর কথা ও আসল কারণ জানানো হয়নি। এবং সেখানে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ হলেও পুলিশি হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর হার শ্বেতাঙ্গদের সাড়ে তিনগুণ।’
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় পুলিশ একজন কৃষ্ণাঙ্গের গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে মেরে ফেলার মর্মান্তিক দৃশ্য বিশ্ববাসী আজও ভোলেনি, উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু তাই নয়, ফিলিস্থিনের শিশুরা তাদের বাড়িঘরে হামলাকারী ইসরায়েলীদের ওপর ঢিল ছুঁড়লে ইসরায়েলী বাহিনী তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। যুক্তরাষ্ট্র তো সেই ইসরায়েলীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং জাতিসংঘে কোনো দেশ যদি এই মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব দেয়, যুক্তরাষ্ট্রই তার বিরোধিতা করে ভেটো দেয়। সুতরাং তাদের এই নিষেধাজ্ঞা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, একপেশে ও অকার্যকর।’
সেইসাথে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে তারা ও আমাদের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী একসাথে কাজ করে আসছে।
ইউআইটিএস উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মানের সভাপতিত্বে ইউআইটিএস চেয়ারম্যান ও পিএইচপি ফ্যামিলি প্রতিষ্ঠাতা সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ডক্টর এ এস এম মাকসুদ কামাল, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল ,বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রফিক প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।
প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জনসংযোগ সমিতির সভাপতি মো. মোস্তফা-ই-জামিল সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান টিপুর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বক্তব্য রাখেন।