বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রাসঙ্গিক চাহিদা মেটাতে কামরাঙ্গীরচরে বিশ্বমানের বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। যা ‘ভিশন- ২০৪১’ অর্জনে সহায়তা করবে।
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস নগর ভবনে তার কার্যালয়ে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমরা কামরাঙ্গীরচরে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবসায়িক অঞ্চল (সিবিডি) তৈরি করব। এলাকাটি একটি সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক শহরে রূপান্তরিত হবে। এখানে একটি ৫০ তলা বিশিষ্ট আকাশচুম্বী ব্যবসায়িক ভবন, বিশ্বমানের সম্মেলন কেন্দ্র এবং একটি হোটেল তৈরি করা হবে।’
‘ঢাকার নতুন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চলের সম্ভাবনা: কামরাঙ্গীরচর’ শীর্ষক একটি খসড়া পরিকল্পনা সম্প্রতি ডিএসসিসিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। খসড়া পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিকল্পনাকারীরা ঢাকার অর্থনৈতিক ওভারভিউকে বিবেচনায় নিয়েছেন।
অর্থনৈতিক পর্যালোচনা অনুযায়ী (২০১১ সালের জনসংখ্যার রিপোর্ট অনুযায়ী) ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ দশমিক ১৭ মিলিয়ন যা মোট শহুরে জনসংখ্যার ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জিডিপিতে এর অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশ (৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা)।
ব্যারিস্টার তাপস বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল অবৈধ দখলমুক্ত করে তা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নদী তীর থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করবো এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী বুড়িগঙ্গা পুনঃখনন করে এর প্রাচীন রূপ পুনরুজ্জীবিত করবো। অবৈধ দখলদাররা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের অবশ্যই উচ্ছেদ করা হবে।’
মেয়র বলেন, ‘আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুজ্জীবিত হলে কেরানীগঞ্জের দুই পাশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে এবং এইভাবে এলাকায় একটি নান্দনিক পরিবেশ তৈরি হবে।’
ব্যারিস্টার তাপস বলেন, একবার সিবিডি বাস্তবায়িত হলে এটি ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যবিত্তের দেশে পরিণত করে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কল্পনায় একটি উন্নত দেশে পরিণত করে ‘ভিশন ২০৪১’ অর্জনে সহায়তা করবে।
কামরাঙ্গীরচর হবে রাজধানীর পরবর্তী বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং এটি হবে নান্দনিক ও আধুনিক স্থাপত্যের উদাহরণ। স্মার্ট প্রবৃদ্ধির প্রতীক হবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সাথে জীবনযাপন করবে।
খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী বিজনেস হাব তৈরি করা হবে এমন প্রত্যাশিত উপাদানগুলি হল- একটি সুউচ্চ কনভেনশন সেন্টার, কনডমিনিয়াম, হাই-ইন্ড অফিস বিল্ডিং, অডিটোরিয়াম, সেমিনার হেরিটেজ মিউজিয়াম, রুফটপ ক্যাফে বা রেস্তোরাঁ, আর্ট গ্যালারি, সবুজ ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন এবং স্ট্যান্ড, ওয়াটার ট্যাক্সি জেটি, ওয়াটার গার্ডেন, পুরান ঢাকার জাদুঘর, ড্রামা থিয়েটার এবং অ্যাম্ফিথিয়েটার।
প্রস্তাাবিত পরিকল্পনায় ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশগত দিক, নদী অববাহিকায় ঘেরা কামরাঙ্গীরচর এলাকার বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের সুবিধা এবং বিদ্যমান আর্থিক কেন্দ্রগুলির খুব কাছাকাছি থাকাকে এর শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
একইভাবে, খসড়া পরিকল্পনায় কামরাঙ্গীরচরকে সিবিডি নির্মাণের উপযোগি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে কারণ এলাকাটি তুলনামূলকভাবে নিম্ন বৃদ্ধির কাঠামো এবং গণট্রানজিট স্টেশনগুলির সাথে সম্ভাব্য সংযোগ রয়েছে।
খসড়া পরিকল্পনায় নদীর পাড়ের অবৈধ দখল, কামরাঙ্গীরচর এলাকার জমির গড় উচ্চতা (৫ দশমিক ৫ মিটার) যা সর্বোচ্চ বন্যা প্রবাহের স্তরের নিচে এবং নিম্ন ভূগর্ভস্থ পানি শোষণকে সিবিডির দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
খসড়া পরিকল্পনা অনুসারে, জমির দুর্বল ভার বহন ক্ষমতার জন্য সুউচ্চ ভবন নির্মাণ ব্যয়বহুল হবে। বিদ্যমান সরু সড়কের আধিক্য সিবিডির হেভি ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য বাঁধা। প্রশস্ত রাস্তা সমূহের পাশে বিদ্যমান উচু স্থাপনা, রাস্তা প্রশস্তকরণে জটিলতা তৈরি করবে। সিবিডিকে কেন্দ্র করে বুড়িগঙ্গার অপর পাশে (কেরানীগঞ্জে) অপরিকল্পিত নগরায়ন হতে পারে। কেরানীগঞ্জের অপরিকল্পিত নগরায়ন সিবিডির জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।