অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
বিশ্ব সর্বশেষ

কমলা হ্যারিসের ঝড়ে দিশাহারা ট্রাম্প

দুই মাস আগেও নিজের বিজয় সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি ভূমিধস বিজয়ের কথা বলা শুরু করেছিলেন। সেটা অবশ্য নির্বাচন থেকে জো বাইডেনের সরে যাওয়ার আগের কথা। কমলা হ্যারিস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বাইডেনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে অবস্থা বদলে গেছে। তিনি শুধু ট্রাম্পের সঙ্গে আগের ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন তা-ই নয়, বেশির ভাগ জনমত জরিপে এগিয়ে গেছেন। বিষয়টা ট্রাম্প কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। কীভাবে কমলাকে ঠেকাবেন, তা ঠাওর করতে না পারায় তিনি এখন কিছুটা উদ্‌ভ্রান্তের মতো আচরণ শুরু করেছেন।

জনমতের কথাটাই আগে বলি। রয়টার্সের সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপ অনুসারে, সারা দেশে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা হ্যারিস চার পয়েন্টে এগিয়ে (৪৫: ৪১ শতাংশ)। গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত বিভিন্ন ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্যেও আগের ঘাটতি কমিয়ে ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে গেছেন কমলা। ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ফক্স নিউজ সর্বশেষ জরিপের যে ফল প্রকাশ করেছে, সেখানেও ‘সান বেল্ট’ হিসেবে পরিচিত চারটি অঙ্গরাজ্যের তিনটিতে এগিয়ে কমলা।

ট্রাম্প তাঁর অনুগত ফক্স নিউজের এই জরিপে ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তাঁর প্রচার শিবির থেকে বলা হয়েছে, ‘অতি কদর্য’ এই জরিপ মোটেই সত্য নয়। ট্রাম্প কমলার চেয়ে শুধু এগিয়ে নন, তিনি নিজের সমর্থন আগের চেয়ে বৃদ্ধি করেছেন। এ কথায় একজন ডেমোক্র্যাট ভাষ্যকার মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প আসলে বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। কালো-সাদার প্রভেদটা বোঝার ক্ষমতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।

কটাক্ষ করে বলা হলেও ট্রাম্পের চলতি আচরণ থেকে স্পষ্ট, তিনি কিছুটা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এমন সব কথা বলছেন যে তাঁর নিজের সমর্থকেরাই বিব্রত হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে কমলার নির্বাচনী সভাগুলোতে বিপুল জনসমাগম হচ্ছে, ব্যাপারটা তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না। কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছেন, জনসভার ছবিগুলো সত্যি নয়, এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি। ডেট্রয়ট বিমানবন্দরে কমলাকে দেখতে কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশ হয়েছে, টিভিতেও সেই ছবি আমরা সবাই দেখেছি। ট্রাম্পের বক্তব্য, এমন কিছু ঘটেনি, সব মিথ্যা কথা।

কোনো কারণ ছাড়াই নিজের জনসভার সঙ্গে তুলনা টেনে ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সভায় এত লোক হয় যে আমেরিকার ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি। ২০১৭ সালে তাঁর অভিষেকে এত লোক হয়েছিল, যা ১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘মার্চ অন ওয়শিংটনকে’ও ছাড়িয়ে যায়। বলা ভালো, মার্টিন লুথার কিংয়ের সেই ঐতিহাসিক সভায় আড়াই লাখের বেশি জনতার উপস্থিতি ছিল। অন্যদিকে সরকারি হিসেবে, ট্রাম্পের অভিষেকে এসেছিলেন বড়জোর হাজার কুড়ি মানুষ।

এসব কথাবার্তা শুনে ট্রাম্পের মানসিক ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি তিনি দাবি করেছেন, কয়েক বছর আগে সান ফ্রান্সিসকোর মেয়র উইলি ব্রাউনের সঙ্গে এক হেলিকপ্টার ভ্রমণের সময় তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন, অল্পের জন্য জানে বেঁচে যান। গল্পটা বেশ রগরগে, কিছুদিন আগে আততায়ীর গুলি থেকে তিনি বেঁচেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তা মোটেই সত্য নয়। উইলি ব্রাউনকে এ কথা জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর হাসতে হাসতে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। ‘ও একটা আস্ত মিথ্যুক,’ বলেছেন ব্রাউন।

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

ওই কথা উল্লেখ করে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস লিখেছে, লোকটা আসলে মানসিক রোগে ভুগছে। পাবলিক রেডিও এনপিআর জানিয়েছে, ফ্লোরিডায় তাঁর মার-আ-লাগো বাসভবনে যে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই গল্প করেন, সেখানে তিনি সব মিলিয়ে ১৬২টি মিথ্যা কথা বলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট গত চার বছরে ট্রাম্পের বলা মিথ্যার যে হিসাব রেখেছে, তাতে অবশ্য মোট সংখ্যাটা ইতিমধ্যে ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৬ জানুয়ারির দাঙ্গা ও মার-আ-লাগোতে সরকারি নথি নয়ছয় করার অভিযোগে নতুন করে মামলা ঠুকেছেন বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ। এতে ট্রাম্প এতটাই ক্ষিপ্ত হন যে নিজের মালিকানাধীন ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ ওয়েবসাইটে তিনি মধ্যরাতে আধঘণ্টায় ২৭টি বার্তা পোস্ট করেন। তাতে তিনি জ্যাক স্মিথের শ্রাদ্ধ করার পাশাপাশি বাইডেনের বিচার বিভাগকে তাঁর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। বাইডেন তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প। এ কথার জন্য কোনো প্রমাণ দাখিলের প্রয়োজন অবশ্য তিনি দেখেননি।

ট্রুথ সোশ্যালে কমলার বিরুদ্ধেও ট্রাম্প কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। অতিসম্প্রতি তিনি অন্যের করা এমন এক পোস্ট আবার ছাপিয়েছেন, যেখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে কমলা ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে যৌন সম্পর্ক রয়েছে। এর আগে আরেক পোস্টে তিনি কমলা ও উইলি ব্রাউন সম্পর্কে একই রকম কদর্য মন্তব্য করেছিলেন।

ব্যাপারটা যে স্বাভাবিক নয়, তা সাংবাদিকদের নজর এড়ায়নি। ট্রাম্পের উপদেষ্টা ডেভিড আরবান সিএনএনকে জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পকে অনেকবার বলেছেন এসব অবান্তর কথার বদলে তাঁর উচিত হবে অভিবাসন ও অর্থনীতির মতো জরুরি বিষয় নিয়ে কথা বলা। এখন সেটাই দরকার। কিন্তু তাঁর কথায় কোনো কাজ হয়নি।

কমলা হ্যারিস ও তাঁর প্রচার শিবির ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছে বলেই মনে হয়। কৃষ্ণকায় এই নারীর বিরুদ্ধে ট্রাম্প যত নোংরা কথা বলবেন, নারী ভোটারদের মধ্যে তাঁর সমর্থন তত কমবে। কিছুদিন আগে ট্রাম্প কমলার গাত্রবর্ণ নিয়ে বিদ্রূপ করেছিলেন। ‘ওকে তো আমি ভারতীয় জানতাম, এখন দেখি হঠাৎ তিনি কৃষ্ণকায়,’ ট্রাম্পের এই অভিযোগ মিথ্যা, কমলা বরাবরই নিজেকে একই সঙ্গে কালো ও দক্ষিণ এশীয় হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। গত সপ্তাহে সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মৃদু হেসে কমলা বলেন, ‘এসবই পুরোনো রাজনৈতিক খেলা। এ প্রশ্ন বাদ দিন, অন্য কথা বলুন।’

সম্পর্কিত খবর

তালেবানের দখলে আফগানিস্তানের তৃতীয় প্রাদেশিক রাজধানী

News Editor

চিকিৎসা গ্রহণের পর দেশে ফিরলেন রাষ্ট্রপতি

gmtnews

ওআইসি’র নারী উন্নয়ন সংস্থায় বাংলাদেশের যোগদান

gmtnews

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত