আগামী বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করবেন কমলা হ্যারিস। এর মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে কমলার জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়ার একটি মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে।
প্রায় এক মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দেন তিনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। গত ২১ জুলাই বেলা ১টা ৪৬ মিনিটের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ঘোষণাটি দিয়েছিলেন তিনি।
গত জুনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ার পর দলের অভ্যন্তরে বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন বাইডেন। দলের নেতা–কর্মীদের চাপের মুখে ৮১ বছর বয়সী এই নেতা প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য হন। অনেকেই তাঁর বয়স ও মানসিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। বাইডেন যখন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন, তার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
কমলাকে বাইডেনের সমর্থন
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রথম বার্তাটি দেওয়ার ২৭ মিনিটের মাথায় কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন বাইডেন। ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলাকে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেন তিনি।
এক্সে দেওয়া পোস্টে বাইডেন বলেন, ‘২০২০ সালে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর আমার প্রথম সিদ্ধান্তটিই ছিল কমলা হ্যারিসকে আমার ভাইস প্রেসিডেন্ট করার। আর এটা ছিল আমার নেওয়া সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। চলতি বছর কমলাকে আমাদের দল থেকে মনোনীত (প্রেসিডেন্ট প্রার্থী) করার জন্য আজ আমি তাঁকে পূর্ণ সমর্থন ও স্বীকৃতি দিচ্ছি।’
‘অসাধারণ নেতৃত্বের’ জন্য বাইডেনকে তখন ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। বলেছিলেন, বাইডেনের সমর্থন পেয়ে তিনি ‘সম্মানিত’ বোধ করছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে সাধ্যমতো সবকিছু করার অঙ্গীকার করেন কমলা।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গভর্নর, সিনেটর, সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রগতিশীল ও সংস্কারপন্থী মানুষেরা তাঁকে সমর্থন জানাতে থাকেন। এতে দলীয় ঐকমত্যের চিত্র ফুটে ওঠে।
কমলা হ্যারিসের স্বামী ডগলাস এমহফ খবরটা একটু দেরি করেই জানতে পেরেছিলেন। বাইডেনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেওয়ার খবরটি যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন এমহফ লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি সোল সাইকেল ক্লাসে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তখন মোবাইল ফোন ছিল না। পরে মোবাইল হাতে নিয়ে এমহফ দেখেন, তাঁর অনেকগুলো মিসড কল জমা হয়ে আছে। এর মধ্যে তাঁর স্ত্রীর নম্বর থেকেও কয়েকটি ফোন এসেছে।
কমলা হ্যারিসের খবরটি জানতে পারার পর এমহফ মজা করে বলেছিলেন, ‘আর কখনোই গাড়িতে ফোন ফেলে আসব না।’
‘যখন আমরা লড়াই করি, আমরা জিতি’
কমলা হ্যারিস যে সময়ে প্রচারণায় নামেন, তখন নির্বাচনের মাত্র তিন মাস বাকি। ‘যখন আমরা লড়াই করি, আমরা জিতি’—এমন স্লোগান নিয়ে মাঠে নামেন কমলা।
ডেলাওয়ারে প্রচারে নিয়োজিত কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে কমলা বলেন, ‘আমাদের বার্তাগুলো আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে যাচ্ছি এবং আমাদেরই জয় হবে।’
বাইডেনের প্রচারশিবিরের হয়ে যাঁরা কাজ করছিলেন তাঁদের সঙ্গে নিয়েই প্রচার শুরু করেন কমলা হ্যারিস। তিনি একই কার্যালয় ও একই লোগো ব্যবহার করছেন।
তবে প্রচারাভিযানে তাঁর বক্তব্য বাইডেনের থেকে আলাদা।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প হলেন ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর তাই এক সময়ের কৌঁসুলি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কমলা তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা দিয়েই ট্রাম্পকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে বয়সের ব্যবধানের বিষয়টিও সামনে আনছেন কমলা হ্যারিস। ট্রাম্প তাঁর চেয়ে প্রায় ২০ বছরের বড়। বাইডেন যখন প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন ট্রাম্প নিজেই বাইডেনকে বয়স বেশি বলে আক্রমণ করতেন। বলতেন, বাইডেন এতটাই বুড়ো যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা তাঁর নেই।
কমলা হ্যারিস নির্বাচনী প্রচারণায় নামার পর অনুদানের প্রবাহ বেড়েছে। ৪৮ ঘণ্টায় ১০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছেন তিনি।
তাঁর প্রার্থিতায় সমর্থকদের মধ্যে উদ্যম তৈরি হয়েছে, তা কেবল জনমত জরিপেই প্রমাণ হয়নি, তাঁর নির্বাচনী সমাবেশেও বিপুল জনসমাগম দেখা গেছে।
সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করার পর নিজের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট খুঁজতে থাকেন কমলা। কয়েক দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নেন। সাধারণত এ প্রক্রিয়াটি চালাতে কয়েক মাস লেগে যায়।
গত ৬ আগস্ট মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের ৬০ বছর বয়সী গভর্নর টিম ওয়ালজকে রানিং মেট তথা নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন কমলা। ওয়ালজ হলেন সাবেক স্কুলশিক্ষক ও ফুটবল কোচ। ওয়ালজের নাম ঘোষণার পরপরই তাঁরা দুজন মিলে পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে সফর শুরু করেন।
২২ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করবেন কমলা। আর ৫ নভেম্বর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হবে তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ।