পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ (১২-১৭ রবিউল আউয়াল) উপলক্ষে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘ইসলামের নবী (সা.): বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্যের প্রতীক’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার।
ঢাকার ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেযা মীর মোহাম্মাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল-মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম শাহাবুদ্দিন মাশায়েখি রাদ ও গণভবন মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ সাইফুল কবীর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার বলেন, রাসুল ছিলেন প্রকৃতই মুসলিম জাতির একতার প্রতীক। তার মাধ্যমেই জাহেলিয়াতের আঁধার দূর হয়ে বিশ্ব মানবতা ও ঐক্যের আলোয় আলোকিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা মুসলিমরা আজ রাসুল (সা.) এর মানবিকতা, সততা ও ঐক্যবদ্ধতার শিক্ষা থেকে দূরে সরে এসেছি। লোভ ও দুনিয়াবি প্রাপ্তির সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা আজ আমাদের প্রবলভাবে গ্রাস করে রেখেছে। আমাদের উচিত রাসূলের শেখানো ঐক্যের পথে চলা, আর তা শুরু হওয়া উচিত আমাদের পরিবার থেকে। এভাবেই তা পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়বে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসুল (সা.)-কে রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ রাসুল (সা.) হলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য পাঠানো পূর্ণাঙ্গ রহমতস্বরূপ, যার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তার এই রহমত তার সৃষ্ট প্রতিটি জীবের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কোনো বিশেষ জাতি বা যুগ নয়, বরং রাসুলের মাধ্যমে পাঠানো এই রহমতের ধারা কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির জন্য বহমান থাকবে। রাসুলের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা এতটাই উঁচুতে ছিল যে, অমুসলিমরাও তার সততা ও বিশ্বস্ততা নিয়ে কখনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি।
বক্তারা বলেন, ইসলামি বিশ্ব হলো একই দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো বা একটি সমন্বিত পরিবারের মতো যার শেকড় অনেক গভীরে এবং এর সংযোগ স্থাপনকারী শক্তিশালী উপাদান রয়েছে, যা কিনা এই বৃহৎ ধর্মীয় পরিবারকে সুদৃঢ় (সমন্বিত) ও শক্তিশালী করতে পারে এবং সদা-সর্বদা ও সর্বত্র একত্র রাখতে পারে।
রাসুল ও আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিদের সিলমোহর মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) এর উজ্জ্বল ও বরকতময় অস্তিত্ব বিশ্বের সব মুসলমানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম যা সর্বশেষ ঐশী ধর্ম হিসেবে ইসলাম ও আসমানি কিতাব আল কুরআনের পাশাপাশি বিশ্বের সমস্ত মুসলমান ও ইসলামি উম্মাহর ধারাবাহিকতা ও স্থায়িত্বের স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত।
ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) তার নবুওয়াতের ২৩ বছরে ইসলাম ধর্মের মূল কান্ডারি হিসেবে সবার জন্য যেসব পরামর্শ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে গেছেন, তাতে তার আনুগত্য ও অনুসরণ করাই ইসলামি উম্মাহর ঐতিহাসিক ও অগ্রসরমান পথ চলার মূল কথা, যা সব বিভেদ ও বিভাজন দূর করতে সক্ষম।
বক্তারা বলেন,পবিত্র কুরআনে সর্বশক্তিমান আল্লাহর বাণী অনুসারে একজন প্রকৃত মুসলমানকে ইসলামের নবীর আনুগত্য করার জন্য অবশ্যই কাফেরদের সঙ্গে কঠোর এবং তার একই ধর্ম অনুসারীদের সঙ্গে সদয় ও বিনম্র হতে হবে। আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা মোকাবিলায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।