আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগই ভোটে জিতবে, রবিবার (৭ মে) লন্ডনে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মন্তব্য করেন। ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে লন্ডনে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় নানা পেশার মানুষের সঙ্গে হাজারো দলীয় নেতাকর্মী যোগ দিয়েছিলেন সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগেরও আহবান জানান। দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি ১৯৭৫ সালের বিভীষিকাময় স্মৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন। ভারত থেকে আমি লন্ডনে আসার বিমানের টিকেট কেনার টাকা ছিল না বলে রেহানার বিয়েতে আসতে পারিনি। পরে যখন সে সন্তানসম্ভবা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সে সময় সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। লন্ডনে আসার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর যখন আমরা সরকার গঠন করার সুযোগ পাই, তখন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু করি। বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীরা যখন বাংলাদেশে হিউম্যান রাইটস নিয়ে প্রশ্ন তুলে তখন আমার শুধু মনে হয় আমাদের কি হিউম্যান রাইটস ছিল না? একটা মামলা পর্যন্ত করার অধিকার আমাদের ছিল না। তখন তো কেউ প্রশ্ন তুলেননি। আমার ছোট ভাই শেখ রাসেল কি অপরাধ করেছিল আমার মা কি অপরাধ করেছিল। আমার দুই ভাই তো মুক্তিযোদ্ধা ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেইসব খুনিদের জিয়া বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। খালেদা জিয়া ফিরিয়ে এনে পররাষ্ট্র দপ্তরে চাকরি দেয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে রশিদকে বিরোধী দলীয় নেতা বানায়, খুনিদের বারবার পুরস্কৃত করা। কী প্রমাণ করে? ২০০১ সালের নির্বাচনের কথা একবার স্মরণ করেন। আমাদের কত নেতাকর্মী বিদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে, চোখ উপড়ে দিয়েছে। বসতবাড়ি কেটে পুকুর বানিয়ে দিয়েছিল। আমাকে মিটিং করতে দেওয়া হয়নি। সেই বিভৎস নির্যাতন নিপীড়নের বিভিন্ন জায়গার তাঁর সফরকালীন ঘটনার বর্ণনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রকম হাজার হাজার ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশকে আমরা যে জায়গায় রেখেছিলাম, তারা এসে সব ধ্বংস করে দেয়। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা আমাকে ভোট চোর বলে, আমি জিজ্ঞাসা করি ভোট চোর বলার অধিকার কি তোমাদের আছে? এরা স্বাধীনতার চেতনা, দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী খুনিদের দল। জীবনে রাজনীতি করবে না মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে এসেছিল। বিএনপি হচ্ছে ভোট ডাকাতের দল। জিয়াউর রহমান হ্যাঁ-না ভোট কি ছিল দেশের মানুষ জানে। সংবিধান ভঙ্গ করে একাধারে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান বনে যায় জিয়া। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কোনো দল যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তখন রাষ্ট্রপতি সাহাবউদ্দিন আমাকে প্রস্তাব দেন, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি আপনাকে সমর্থন দেবে আপনি সরকার গঠন করতে পারেন। আমি না করেছিলাম জামায়াত আর জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আমি সরকার গঠন করব না। দেশের মানুষ আমাদের নির্বাচিত করলেই তবে সরকার গঠন করব। আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে বা ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেনি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে থাকা অবস্থায় আমেরিকা আমাকে প্রস্তাব দিল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি জানিয়ে দিলাম দেশের চাহিদা পূরণ করে ৫০ বছরের রিজার্ভ রেখে তবেই আমরা গ্যাস বিক্রি করব। আপনারা আগে সার্ভে করুন কী পরিমাণ গ্যাস আমাদের মজুদ আছে। তারা সার্ভে করতে পাঠায়, প্রথমবার সার্ভের পরেই আর কথা বলে না। বললাম জনগণের সম্পদ আমি বিক্রি করতে পারি না। লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়কের সময় একই আলোচনা। গ্যাস বিক্রি করতে হবে, আমি বললাম গ্যাসই নাই বিক্রি করব কোথা থেকে। বিএনপি মুচলেকা দিয়ে আসল। আমি সেদিন বলেছিলাম আল্লাহ মন বুঝে ধন দেয়, আপনি গ্যাস বিক্রি করতে পারবেন না। তাই হয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় এসে এক ফোঁটা গ্যাসও পায় নাই। আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, এক-এগারোতে যখন আমাকে জেলে দিল, কোনো কাজ নেই, জেলে বসে বসে লিখতে শুরু করি, যদি কখনো ক্ষমতায় যাই কী কী করব। যার ফলশ্রুতিতে আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভিশন ২০২১ নির্বাচনী ইশতেহারে নিয়ে এসেছিলাম।জেলখানার স্মৃতিচারণে শেখ হাসিনা বলেন, সেই সময়ের ডিজিএফআই-এর প্রভাবশালী কর্মকর্তা আমিন আমাকে এসে বলেন আপনাকে নির্বাচন করতে হবে না, আপনি প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় থাকবেন। তাঁকে বলেছিলাম ১৯৫৪ সালে আমার বাবা মন্ত্রী ছিলেন। আমি এসব চাই না, নির্বাচন চাই। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিল জেনারেল বারি, বারিই তারেককে ঠিকমতো ঝাড়ি দিয়েছিল লাথি-গুঁতা দিয়েছিল। তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে এসেছিল বিদেশে। তারা বলেন, বাংলাদেশে নাকি কোনো উন্নতি হয় নাই। বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিকভাবে, দেশের প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে, মাথাপিছু আয়, মুদ্রাস্ফীতি, বাজেটের আকার, জিডিপি, বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে শুরু করে প্রতিটা সেক্টরে সর্বশেষ ১৪ বছরে তাঁর সরকারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ হৃতদরিদ্র থাকবে না। খালেদা জিয়ার উন্নয়নের গতিতে নিচে নামতে নামতে বিদ্যুতের উৎপাদন ৩২০০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছিল। আর এখন ২৫ হাজার মেগাওয়াট। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের কর্মসংস্থানে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, সংসারের কাজও এখন কর্মসংস্থানের হিসাবে ধরা হবে। তিনি বলেন, দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা হাইটেক পার্কসহ ইকোনমি অঞ্চল তৈরি করেছি। সেখানে প্রবাসীদের জন্য আলাদা জোন থাকবে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসায় আপনারা বিনোয়োগ করতে পারেন। এয়ার বাসের সঙ্গে চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, বিমান এ দুইটি কার্গো বিমান ও আরো ৮টি যাত্রীবাহী বিমান যোগ হবে বিমানের বহরে। তারেক রহমানের ৪০ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই খুনি, লুটেরা চোরের দল যাতে আর ক্ষমতায় না আসতে পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে, আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগই ভোটে জিতবে। ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
previous post
সম্পর্কিত খবর
- মন্তব্য
- ফেসবুক কমেন্টস