আফগানিস্তানে খুব শিগগির নিজেদের ইসলামী সরকার কাঠামো ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে তালেবান। তালেবানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে প্রধান ধর্মীয় নেতা ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসাবে ঘোষণা করা হবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদক সরকার গঠনের ব্যাপারে জানতে, কাবুল ও কান্দাহারে তালেবান কর্মকর্তাদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন ও অন্যান্য সূত্রের সঙ্গেও আলোচনায় আভাস পান যে, আখুন্দজাদা-ই হচ্ছেন ইসলামী আমিরাতের সর্বোচ্চ নেতা।
আখুন্দজাদা ইতোমধ্যেই কান্দাহারে তালেবানের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বলেও জানা গেছে। তালেবানের আনুষ্ঠানিক আলোচনায় তাঁকে ‘জাইম’ ও ‘রাহবার’ বলে উল্লেখ করা হয়। দুটি শব্দের অর্থই হলো- ‘নেতা’।
ইরানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রপ্রধান আয়াতুল্লাহ আল খামেনিকেও এমন ধর্মীয় তাত্ত্বিক সম্বোধনে ডাকা হয়।
তবে সরকার ঘোষণা কখন দেওয়া হবে এবং এতে সকল জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী শুরা সদস্য থাকবেন কিনা- তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে ক্রমবর্ধমান মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তালেবানের নতুন সরকার নিশ্চিতভাবেই পর্বতপ্রমাণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে।
তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দাতা সংস্থাগুলো সহযোগিতা বন্ধ করায় নতুন সরকার নগদ অর্থ সংকটেও পড়বে। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়েও নারাজ অধিকাংশ দেশ।
এ অবস্থায় আফগানিস্তানে বিদ্যুৎ সংযোগের মতো মৌলিক সুবিধাদি বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সাধারণ আফগানরা খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে বিপাকে পড়েছে। অনেকেই হচ্ছে অপুষ্টির শিকার।
তবে সরকার গঠন নিয়ে এখনও আলোচনা চলমান আছে জানিয়ে, নাম না প্রকাশের শর্তে জ্যেষ্ঠ ওই তালেবান কর্মকর্তা বলেছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের (২ সেপ্টেম্বরের) মধ্যেই যোগাযোগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা আসতে পারে।
তালেবানের সংস্কৃতি বিষয়ক কমিশনের সদস্য বিলাল করিমির বক্তব্যসূত্রে ব্লুমবার্গ নিউজও নতুন সরকার গঠনের পরিকল্পনা ও আখুন্দজাদার নতুন পদমর্যাদা সম্পর্কে জানায়।
তালেবান কর্মকর্তারা আরও জানান, গোষ্ঠীটির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার আনুষ্ঠানিক সরকার প্রধান হবেন বলে আশা করছেন তারা। বারাদার রাষ্ট্র পরিচালনায় সরাসরি জড়িত থাকবেন, আর চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ ও শীর্ষ আধ্যাত্মিক নেতার পদ অলংকৃত করবেন আখুন্দজাদা-ই।
মোল্লা বারাদার কাতারের দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় তালেবান প্রতিনিধি দলের প্রধান আলোচক ছিলেন। তার নেতৃত্বে সমঝোতা হওয়ার পরই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।
সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদার ডেপুটি হিসেবে সরকারের অন্যান্য শীর্ষ পদাসীন হতে পারেন, মৌলভি মোহাম্মদ ইয়াকুব এবং সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। তবে তালেবানের প্রতিশ্রুতি অনুসারে শুরা কাউন্সিলে সকল দল-মতের প্রতিনিধি থাকবে কিনা এবং এ পর্ষদের ক্ষমতা কতখানি হবে- সে সম্পর্কে এখনও কোন আভাস পাওয়া যায়নি।
হামিদ কারজাই ও আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ’র মতো পশ্চিমা সমর্থিত পূর্ববর্তী সরকারের নেতারা তালেবান সরকারে পদ পাচ্ছেন কিনা- তাও এখনো অজানা। প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পালিয়ে যাওয়ার পর, কারজাই ও আব্দুল্লাহ-ই কাবুলে থেকে যান এবং তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির আলোচনা করেছেন।
এছাড়া, তালেবানের রাজধানী কাবুল দখলের পর থেকে অস্থায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী সদর ইব্রাহিমও মন্ত্রীসভায় স্থান পেতে পারেন।