ইতিহাসের প্রথম হওয়া ওই আউটই এই ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হয়ে থাকবে নিশ্চিতভাবে।
তবে এই ম্যাচ আশা বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের। হতাশার বিশ্বকাপে অষ্টম ম্যাচে এসে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় জয়। এতে টিকে আছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা। প্রথমে চারিথ আসালাঙ্কার সেঞ্চুরিতে বেশ ভালো সংগ্রহ পেয়েছিল লঙ্কানরা। পরে সাকিব ও শান্তর দুর্দান্ত জুটি আর ব্যাটিং নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের জয়।
সোমবার দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রান করে শ্রীলঙ্কা। ৪১ ওভার এক বলে ওই রান তাড়া করে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে হারালো তারা, সেটিও দলটির বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে।
ছয় ম্যাচ পর এবারের বিশ্বকাপে জয় পেলে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর টানা ছয় ম্যাচ হেরেছে তারা। এই জয়ের পর রান রেটে এগিয়ে থেকে পয়েন্ট টেবিলে সাতে আছে বাংলাদেশ, আটে শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিক পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বকাপের বাকি সাত দল খেলবে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ খেলতে নামে ভীষণ চাপ নিয়ে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার স্বপ্ন আক্ষরিক অর্থেই টিকিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প ছিল না তাদের সামনে। শুরুটাও ভালো হয় বাংলাদেশের।
প্রথম ওভারেই ৫ বলে ৪ রান করা কুশল পেরেরাকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। তাতে অবশ্য বড় কৃতিত্ব মুশফিকুর রহিমের। পাখির মতো উড়ে বাঁদিকে দাঁড়ানো প্রথম স্লিপ ফিল্ডারের সামনে থেকে ক্যাচ নেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে আর উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
১০ ওভারে লঙ্কান ব্যাটাররা তোলেন ৫২ রান। ১২তম ওভার করতে এসে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এবার ৩০ বলে ১৯ রান করা কুশল মেন্ডিসকে ফেরান তিনি। তার বলে লং অনে দারুণ ক্যাচ নেন শরিফুল।
দলের অষ্টম ম্যাচে এসে একাদশে সুযোগ পাওয়া তানজিম হাসান সাকিবও পান উইকেটের দেখা। ৮ চারে ৩৬ বলে ৪১ রান করা পাথুম নিশাঙ্কাকে বোল্ড করেন তিনি। এরপর ৬৩ রানের জুটি গড়েন সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালাঙ্কা।
তাদের জুটিও ভাঙেন সাকিব। ৪২ বলে ৪১ রান করে সামারাবিক্রমা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দেন। এরপরই ঘটে বিরল এক ঘটনা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘টাইমড আউট’ হন অ্যাঞ্জেলা ম্যাথিউস। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যাটার আউট হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটারকে পরের বল খেলতে হয়।
কিন্তু সেটি করতে পারেননি ম্যাথিউস। তার হেলমেট নিয়েও সমস্যা হচ্ছিল। এমন সময়ে আম্পায়ারের কাছে আবেদন করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নিয়ম অনুযায়ী কোনো বলের মুখোমুখি না হয়েই আউট হয়ে সাজঘরে ফেরত যান ম্যাথিউস। এমন আউট হওয়ার পর মেনে নিতে পারেননি লঙ্কান অলরাউন্ডার, ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে পরে আরও এক দারুণ জুটি গড়েন আসালাঙ্কা। ‘টাইমড আউট’ নাটকীয়তার চাপ সামলে তারা ব্যাট করতে থাকেন। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন ৩৬ বলে ৩৪ রান করা ধনঞ্জয়া।
প্রথম দফায় বল তালুবন্দি করতে না পারলেও পরে স্টাম্প ভাঙতে পারেন মুশফিক। তাতে ভাঙে আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়ার ৮২ বলে ৭৮ রানের জুটি। আরেক প্রান্তে দলের রান এগিয়ে নিতে থাকেন আসালাঙ্কা। তিনি পান সেঞ্চুরির দেখাও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে ১০৫ বলে ১০৮ রান করে তানজিম হাসান সাকিবের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তার বিদায়ের পর আর কেবল এক রান করতে পারে শ্রীলঙ্কা।
রান তাড়ায় নেমে আরও একবার উদ্বোধনী জুটিতে বড় রান পায়নি বাংলাদেশ। কেবল ভারত ম্যাচ ছাড়া কোনোটিতেই রান করতে না পারা তানজিদ হাসান তামিম এদিন ফেরেন তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে। ৫ বলে ২ চারে ৯ রান করে দিলশান মাদুশঙ্কার বল ব্যাটের আগায় লেগে ক্যাচ যায় কাভারে দাঁড়ানো পাথুম নিশাঙ্কার হাতে।
আরেক ওপেনার লিটন দাসও নিজের রানটা বড় করতে পারেননি। ২২ বলে ২৩ রান করার পর মাদুস্কার বল লিটনের পায়ের আগায় গিয়ে সরাসরি আঘাত করে। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হয় লিটনকে। এরপরই দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে তোলেন সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
ম্যাথিউসের বলে সাত রানে থাকতে জীবন পান সাকিব। এরপর থেকে সাকিব হয়ে ওঠেন বিধ্বংসী। পুরো ইনিংসে দেখার মতো বেশ কিছু শট খেলেন পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে সমালোচনার ভেতর থাকা সাকিব। ২ ছক্কা ও ১২ চারের ইনিংসে ৬৫ বলে ৮২ রান করে আউট হন ম্যাথিউসের বলে।
ফ্লিক করতে গিয়ে তার স্লোয়ার সাকিবের ব্যাটের আগায় লেগে ক্যাচ যায় আসালাঙ্কার হাতে। সাকিবকে আউট করার পর হাতে ঘড়ি দেখানো উদযাপন করেন ম্যাথিউস। প্রথম ইনিংসে হওয়া ‘টাইমড আউট’ নিয়ে খোঁচা দেন তিনি।
সাকিবের সঙ্গে ১৪৯ বলে ১৬৯ রানের জুটি গড়েন শান্ত। সঙ্গীর বিদায়ের দুই ওভার পর ফিরে যান তিনি, ওই ম্যাথিউজের বলেই। শান্ত আউট হন নার্ভাস নাইন্টিজে। এক রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ।
সেটি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। শুরুতে কিছুটা সময় নিলেও পরে এক ওভারে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ব্যবধান কমিয়ে আনেন রিয়াদ। কিন্তু দুজনেই ফিরে যান সাজঘরে। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৩ বলে ২২ রান করেন রিয়াদ। তার আউট হওয়ার আগেই মুশফিককে ফিরিয়ে লঙ্কানদের ব্রেকথ্রু এনে দেন মাদুশঙ্কা।
পরে মেহেদী হাসান মিরাজও থিকশানার বলে লং অফ দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলে দুশ্চিন্তা আরও বাড়ে। তবে ম্যাচ শেষ করেই ফেরেন তাওহীদ হৃদয় ও তানজিম সাকিব। দুটি দারুণ ছক্কা হাঁকানো হৃদয় ৭ বলে করেন ১৫ রান। আর ৬ বলে ৫ রান আসে তানজিম সাকিবের ব্যাটে।