পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৫ আগস্টের ঘাতকরা যেসব দেশে লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেসব দেশে তাদের সম্ভাব্য অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ বিদেশে মিশনগুলোকে সক্রিয় করেছে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশে বিশেষ করে যেসব দেশে দ-প্রাপ্ত পলাতক আসামিরা লুকিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে, আমাদের মূল তথ্যের ভিত্তিতে তাদের খোঁজার জন্য হোস্ট দেশগুলোর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, পাঁচ পলাতক খুনিকে গ্রেফতার অভিযানের অংশ হিসেবে এর আগে বিদেশে সব মিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর মোট ১২ জন সামরিক কর্মকর্তাকে মৃত্যুদ-াদেশ দেওয়া হয় এবং এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকর করা হয়। একজনের বিদেশে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
অনুপস্থিতিতে বিচারের পর মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ছয় ঘাতকের মধ্যে তিন জনকে থাইল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত থেকে একজন করে ফিরিয়ে আনা হয়।
এখন পর্যন্ত কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে লুকিয়ে থাকা দুই নিন্দিত খুনি বরখাস্তকৃত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ চৌধুরীর বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মোমেন বলেন, তার মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে মার্কিন ও কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার জোরালো প্রচেষ্টা শুরু করেছে।
তিনি এই দুই দেশে লুকিয়ে থাকা খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে সংশ্লিষ্ঠ দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে সেখানকার কর্তৃপক্ষের ওপর কমিউনিটি চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
মোমেন অন্যান্য দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেখানকার বাংলাদেশ মিশনের পাশাপাশি হত্যাকারীদের সন্দেহজনক অবস্থানের ওপর নজর রাখারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের প্রবাসী ভাইদের পাশাপাশি দেশবাসীকে তাদের (পলাতক খুনি) সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানাই যাতে আমরা আমাদের কলঙ্ক ঘুচাতে পারি।’
মোমেন অবশ্য অন্যদের বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আগে বলেছিল যে তাদের রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে ইন্টারপোল তাদের সন্ধানের জন্য ‘রেড নোটিশ’ জারি করায় তাদের কেউ কেউ এক দেশ থেকে অন্য দেশে অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকতে পারে।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, হত্যাকান্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ আফ্রিকার একটি দেশে গোপনে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
পূর্ববর্তী রিপোর্টগুলোতে অনুমান করা হয়েছিল যে কয়েকজন পাকিস্তন, লিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, স্পেন এবং জার্মানিতে লুকিয়ে থাকতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পৃথক মন্তব্যে বলেন, রাশেদ চৌধুরীকে অবিলম্বে প্রত্যর্পণে ‘উল্লখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। আর নূর চৌধুরীকেও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
কামাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীর অবিলম্বে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে কিন্তু মৃত্যুদন্ড-প্রাপ্ত আসামি হওয়ায় কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে সাংবিধানিক বাধা রয়ে গেছে।
রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যর্পণের ব্যাপারে তার আশাবাদ ব্যক্ত করে মোমেন বলেন, ‘তিনি (রাশেদ) মার্কিন কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় এখন সেখানে তার অভিবাসন মামলা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীরা নাগরিক সমাজের মাধ্যমে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে রাশেদকে ফেরত পাঠানোর আবেদন করতে পারলে প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হতে পারে।
মোমেন কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োাগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদের কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে ‘কানাডা ঘাতকদের আস্তানা হতে পারে না।’
মোমেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে চিহ্নিত পলাতক খুনিদের বাসার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার আহ্বান জানান যাতে তারা তাদের প্রতিবেশীদের জানতে পারেন যে তাদের পাশে একজন খুনি বাস করছে।
বাংলাদেশ গত বছরের অক্টোবরে পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধানের নেতৃত্বে ১৯৭৫-এর পলাতক খুনিদের খুঁজে বের করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ স্কোয়াড গঠন করে।
পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) হত্যাকারীদের খোঁজার জন্য ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করে থাকে।
সুত্রঃবাসস