প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ করে অভিভাবকদেরকে তাদের শিশুদের বাইরে খেলাধূলা করতে উৎসাহিত করার আহবান জানিয়েছেন। যা তাদের যে কোন ধরনের ভুল পথে যাওয়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হবে। কারণ, জাতি গঠনে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ শিশু প্রায় সময় ফ্ল্যাটে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং আইপ্যাড নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। যা তাদের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই অমঙ্গলজনক।’
প্রধানমন্ত্রী শিশুদেরকে কিছু সময়ের জন্য হলেও বাহিরে গিয়ে মাঠে খেলাধূলা করা এবং দৌড়ঝাপ দেয়ার সুযোগদানে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। এতে শিশুদের সব ধরনের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে।
সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘আমি সকল অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা আপনাদের শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলার প্রতিও মনোযোগী হবেন। তাহলে শিশুরা আর ভূল পথে যাবে না।’
শেখ হাসিনা গতকাল সকালে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে গৌরবোজ্জল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮৫ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও সংগঠককে ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ ‘২০১৩-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ সব কথা বলেন।
তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধূলা শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিকচর্চা একটি জাতির জন্য অপরিহার্য। এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে আমাদের একেবারে ছোট শিশু থেকে সকলকে উৎসাহিত করতে হবে এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ছেলে-মেয়েরা মানুষের মত মানুষ হতে পারবে। তাদের মনটাও ভালো থাকবে, তারা ভালভাবে লেখাপড়া শিখবে এবং বিপথে যাবেনা- এটাই আমার বিশ^াস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধূলা এক ধরনের শরীর চর্চা। এতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শারীরিক এবং মানসিকভাবেও যথেষ্ট উপকৃত হয়। সেই সাথে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক ধরনের খেলাধূলা ছিল, সেগুলো আবার সচল করতে হবে। এ জন্য আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা এবং আন্তঃবিশ^বিদ্যালয় প্রতিযোগিতাগুলো যেন ব্যাপকভাবে চলে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, সাঁতার, হকিসহ বিভিন্ন খেলার সাথে সাথে দেশিয় খেলাগুলো যেমন: ডাংগুলি, সাত চারা গোল্লাছুট থেকে শুরু করে হাডুডুসহ যে সব খেলাগুলো প্রচলিত ছিল, সেগুলো আবার চালু করতে হবে। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। যেটা আমরা ফুটবলের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা শুরু করেছি। ফলে আমাদের অনেক নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা জাতীয় পর্যায়েও বিশেষ অবদান রাখছে। কাজেই এদিকে সকলে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।
এ ব্যাপারে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার তাঁর সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা চাই এ খেলাধূলার বিষয়ে আমাদের আরো উদ্যোগী হতে হবে।
রাজধানী ঢাকায় খেলাধূলার জায়গা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি প্রত্যেক এলাকাতেই যেন খেলার মাঠ থাকে। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। কারণ, প্রত্যেকটা এলাকাতেই খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সংসদ ভবনের পাশে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের খেলাধূলার জন্য একটা একাডেমীও নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
’৯৬ সালে তিনি প্রথম সরকার গঠনের পর বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের অলিম্পিকে আমেরিকা থেকে ৭২টি পদক জয় করে আনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আরো পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে খেলাধুলার উন্নয়নের ওপর একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮৫ জন ক্রীড়া ব্যক্তি ও সংগঠককে এই মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে।
পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকে পাবেন একটি আঠারো ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ পদক, এক লাখ টাকার চেক এবং একটি সনদপত্র।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শহীদ লে. শেখ জামালকে ২০২০ সালের খেলোয়াড় ও সংগঠক হিসেবে (মরণোত্তর) পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাঁর পক্ষে পরিবারের সদস্য এবং খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল পুরস্কার গ্রহণ করেন।